ডিজিট্যাল অ্যারেস্টে সর্বস্বান্ত কলকাতার এক দম্পতি

প্রতারণার নয়া ফাঁদ পাতা হচ্ছে প্রতিদিন-ই। শহর থেকে গ্রাম, বহু মানুষ সেই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এই নতুন কায়দার নাম ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’। বেশ কিছুদিন ধরেই এই অভিনব কায়দায় লুটে নেওয়া হচ্ছে জমানো টাকা। এবার এই ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হলেন খাস কলকাতার এক দম্পতি। একইসঙ্গে জমানো পুঁজি প্রায় সবটাই হারিয়ে ফেলেছেন শুভাশিস রায়, চন্দ্রা রায়।

সূত্রে খবর, একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন শুভাশিস। ২০২১ সালে কোভিড হওয়ার পর থেকে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কাজ ছাড়তে বাধ্য হন। সংসার চলে যাচ্ছিল। কিন্তু একটা ফোন আসার পরই সব গণ্ডগোলের সূত্রপাত।

কিছুদিন আগে ওই ব্যক্তির মোবাইলে একটা ফোন আসে। ওপার থেকে বলা হয়, দিল্লির এসবিআই হেডকোয়ার্টার থেকে ফোন করা হয়েছে। জানানো হয়, তাঁর নামে একটি ক্রেডিট কার্ড ইস্যু হয়েছে, যার থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা তিনি খরচ করেছেন। শুভাশিস স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি এই ধরনের কোনও ক্রেডিট কার্ড নেননি বা খরচও করেননি। তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় যে, দিল্লি পুলিশ যেহেতু এই বিষয়টা নিয়ে তদন্ত করছে, তাই দিল্লি পুলিশকে পুরো বিষয়টা জানাতে হবে।

চন্দ্রা জানান, এরপর তাঁদের বলা হয়, ফোনের লাইন ট্রান্সফার করা হচ্ছে দিল্লি পুলিশকে। ভিডিয়ো কল রিসিভ করেই তাঁরা দেখতে পান, বড় একটি ঘরে দিল্লি পুলিশের পোশাক পরে কয়েকজন বসে রয়েছেন। সেখান থেকে শুভাশিসকে বলা হয়, ‘আপনার নামে ইডি-র অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে। আপনি এখনই আধার কার্ডের ছবি তুলে পাঠান।’

এরপরই ঘাবড়ে যান ওই দম্পতি। আধার কার্ডের ছবি তুলে পাঠিয়েও দেন। আধার কার্ড পাঠানোর এক ঘণ্টা পর তাঁর কাছে ইডির নামে একটি নোটিস আসে, সেখানে বলা হয় যে শুভাশিসকে গ্রেফতার করা হবে। প্রায় আড়াই কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণার মামলায় তাঁর নাম জড়িয়েছে বলেও জানানো হয় শুভাশিসকে। তিনি জড়িত নন বলে দাবি করলে শুভাশিসকে বলা হয়, তাঁর ব্যাঙ্কের সব তথ্য পাঠাতে। এরপর সেভিংস সংক্রান্ত সব তথ্য জানান দম্পতি। এরপর থেকে ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা আরটিজিএস করতে বাধ্য করা হয় তাঁদের। পরবর্তীকালে শুভাশিস বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তারপরেই যান গড়িয়াহাট থানায়। এফআইআর করার পর সাইবার সেলে অভিযোগ রেজিস্টার্ড হয়। কলকাতার সাইবার সেল থেকে জানানো হয়েছে যে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তবে বাকি সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 1 =