২০২৪-এর লোকসভা ভোটের ফলাফলে দ্বিমুখী লড়াইয়েরই প্রতিফলন। তৃণমূল বনাম বিজেপি। দাগই কাটতে পারল না কংগ্রেস, বাম। একমাত্র মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিম ‘সেকেন্ড বয়’ হয়ে দাগ কাটলেন। অন্যদিকে কংগ্রেস মালদহ দক্ষিণের আসন ধরে রাখতে পেরেছে। ডালুবাবুর ছেলে ঈশা খান চৌধুরী মান রেখেছেন। আর সিপিএম যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই। তবে প্রশ্ন উঠছে, নিজেদের নাক কেটে হলেও তৃণমূলের যাত্রা কিছুটা কি ভঙ্গ করতে সফল হল বাম-কংগ্রেস কি না তা নিয়েই। এবার একাধিক তরুণ মুখে ভরসা রেখেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে যাদবপুরের সৃজন ভট্টাচার্য বা শ্রীরামপুরের দীপ্সিতা ধর, ডায়মন্ড হারবারের প্রতীক-উর-রহমানরা কেউই বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্য়ায় সিপিএমের পক্ষে পড়েছে প্রায় ৩৩ লক্ষের মতো ভোট। এর মধ্যে সেলিমেরই প্রাপ্তি ৫ লক্ষ ১৭ হাজার ভোট।
বরং এবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে আইএসএফ। বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, বারাসত কেন্দ্রে বামেদের পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা। সেখানে বিন্দুমাত্র ছাপ ফেলতে দেখা যায়নি বসিরহাটের সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সর্দারকে। সামগ্রিক ভোট বিশ্লেষণ করে মহম্মদ সেলিমও মেনে নিয়েছেন, ‘হয় কাঁধটা আমাদের অতটা চওড়া নয়। না হলে যতটা বোঝা আমাদের কাঁধে মানুষ দেবে ভেবেছিলাম, ততটা বোঝা দেননি। বা আমাদের কাঁধের উপর পুরোটা ভরসা করতে পারেননি। অনেক কিছুই হতে পারে। আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসবে। দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।’
তবে ভোট বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে বাম-কংগ্রেস নিজেদের ঘর গোছাতে না পারলেও তৃণমূলের পথে কাঁটা কিছুটা বিছিয়ে দিতে পেরেছে সিপিএম। যেমন, রায়গঞ্জে ৬৭ হাজার ভোটে হেরেছেন কৃষ্ণ কল্যাণী। ২ লক্ষ ৬২ হাজার ভোট কেটেছেন কংগ্রেসের আলি ইমরান রামজ। অন্যদিকে মালদহ উত্তরে ৭৬ হাজার ভোটে হেরেছেন তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই আসনেই ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ভোট কেটেছেন কংগ্রেসের আলম মোস্তাক।
প্রচারের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস প্রার্থীর নাম করে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আপনাদের এখানে কংগ্রেসের যিনি দাঁড়িয়েছেন, ইনি বিজেপির চোখ। আর সিপিএমের চোখ। এরা ভোটে দাঁড়িয়েছে, জানে জিতছে না। তবু মুসলিমদের মধ্যে ভোটটা কাটাকাটি করে বিজেপিকে জিতিয়ে দেওয়া যায়।’ শুধু তাই নয়, ভোটের বিপুল জয়ের পর মঙ্গলবারও মমতা বাম, কংগ্রেস, আইএসএফকে এক বন্ধনীতে এনে আক্রমণ করেন। তাঁকে এও বলতে শোনা যায়, ‘বিজেপিকে সাপোর্ট দেয় এখানকার কংগ্রেস ও সিপিএম। আর একটা মুসলিম পার্টি জন্মেছে। তাদের বলব নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করবেন না।’ একইসঙ্গে এ প্রশ্নও তোলেন, উত্তর দিনাজপুরে বিজেপির এই সিটটা বাড়িয়ে কী লাভ হল তা নিয়েও। সঙ্গে এও বলেন, বিজেপির এই সিটটা কমলে তো দু’টো ভোট মাইনাস হতো বিজেপির।