রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন কমিশনের ওপর ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিষেক

বুধবার ফের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু-সহ তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। এর আগে সোমবারও সন্ধেয় তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপাল বোসের দুয়ারে গিয়েছিলেন অভিষেক। এদিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আজ আবারও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায় তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে।

অভিষেক জানান, ‘আমাদের দাবি ছিল সময় নষ্ট না করে রাজ্য সরকারকে যাতে অবিলম্বে অনুমতি দেওয়া হয় যাতে জলপাইগুড়িতে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ শুরু করা যায়। অনগোয়িং প্রোজেক্টের ক্ষেত্রে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু নতুন কোনও কাজ শুরু করতে গেলে, আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীন নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে করতে হয়। আমরা সেই মতো আবেদন করেছিলাম। এদিকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও জানিয়েছেন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কথা বলতে পারেননি।’ এই প্রসঙ্গেই অভিষেক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কেন কথা বলেননি, তা আমি জানি না। হয়ত, বাংলার রাজ্যপাল ফোন করছেন বলে, বাংলার দাবি তুলবেন বলে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলছেন না। তবে বাকি দু’জন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রাজ্যপালের কথা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে রাজ্যপাল অনুরোধ করেছেন তাঁর তরফ থেকে। আলোচনা করেন জলপাইগুড়ির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে রাজ্য যে  বাড়ির টাকা দিতে যায়, সেটার অনুমতি দেওয়া হোক। রাজ্যপাল বলেছেন, তাঁকে ওঁরা আশ্বস্ত করেছিল বিষয়টি দেখবে।’

একইসঙ্গে এদিন অভিষেক এও মনে করিয়ে দেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, বুধবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয় নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্যকে অনুমতি দিচ্ছে না কমিশন। প্রায় ১৬০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, যাঁদের মাথার উপর ছাদ প্রয়োজন, যাঁদের ঘর ভেঙে ধুলোয় মিশে গিয়েছে, তাঁদের বাড়ি তৈরির টাকা রাজ্য দিতে চাইলেও অনুমতি নির্বাচন কমিশন দেবে না। রাজ্যকে বলা হয়েছে, চাইলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যেতে পারে। আংশিক ক্ষতি হলে ৫ হাজার টাকা, বেশি ক্ষতি হলে ২০ হাজার টাকা।’ আর এই প্রসঙ্গেই অভিষেকের প্রশ্ন, এরা বাংলা বিরোধী নয়, তো কারা বাংলা বিরোধী?’ এই প্রসঙ্গেই অভিষেক কটাক্ষের সুরে এও জানান, ‘বাংলা থেকে কর বাবদ চার বছরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আর বাংলার টাকা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির টাকা দেওয়া হচ্ছে না, আবার রাজ্য যখন বাড়ির টাকা দেবে, তখন অনুমতিও দেবে না। এটাই বিজেপি নতুন মডেল – না আবাস বানাউঙ্গা, না আবাস বানানে দুঙ্গা। এদিকে গত পরশু অসমে বিহু পালনের জন্য সেখানকার ২ হাজার কমিটিকে দেড় লাখ টাকা করে দেওয়া যেতে পারে বলে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীনই এই অনুমোদন হয়েছে। আর বাংলায় যখন ১৬০০ লোকের বাড়ি প্রয়োজন, তখন ঘরের টাকা দেওয়ার অনুমতি দিল না। অসমে বিজেপি সরকার, তাই অনুমতি দিয়েছে। সেক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন আলাদা। আর বাংলায় বিজেপিকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, তাই গাত্রদাহ। তাই অসমের টাকা ছাড়ছে, বাংলার টাকা বন্ধ।’

এরই রেশ ধরে অভিষেক এও বলেন,‘আগামী পরশু আমি জলপাইগুড়ি যাচ্ছি। ধূপগুড়ির সভার পর এই ১৬০০ পরিবারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করব। আমাদের যে প্রতিনিধিদল দিল্লিতে কমিশনের অফিসে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল, তাঁদেরও আমি বৈঠকে আসতে বলেছি। নির্বাচন কমিশনের অঙ্গুলিহেলনে দিল্লি পুলিশ ও সিআইএসএফ তাঁদের সঙ্গে দিনের আলোয় যে মধ্যযুগীয় বর্বরতা করেছে, তা দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 3 =