পটনায় নীতিশের ডাকা বৈঠকে অংশ নেবেন অভিষেকও

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের উদ্যোগে পটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী শুক্রবার। এই বৈঠকে যোগদানের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর বুধবার তৃণমূলের তরফ থেকে খবর মেলে এই বৈঠকে অংশ নেবেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

প্রসঙ্গত, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের কথা মেনেই দিল্লির বদলে বিহারে বৈঠকের আয়োজন করেন নীতিশ। গত ২৪ এপ্রিল আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন নীতিশ। ওই দিন যে বৈঠক হয় তাতে প্রয়াত জয়প্রকাশ নারায়ণের কথা উল্লেখ করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘নীতিশজিকে অনুরোধ করছি, আপনি পটনায় একটা বির‌োধী বৈঠক ডাকুন।‘ প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটের আগে জয়প্রকাশের উদ্যোগে বিহার থেকেই কংগ্রেস বিরোধী জোট গড়ে তোলার উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল।

এখানে বলে রাখা শ্রেয়, নীতিশকে পটনায় বৈঠক ডাকার পরামর্শ দেওয়ার প্রসঙ্গে মমতা বলেছিলেন, ‘দিল্লিতে অনেক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তা আর এগোয়নি। আঞ্চলিক স্তরে রাজ্যে রাজ্যে বৈঠক হোক।’ এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, মমতার ওই মন্তব্যের নিশানা আদতে কংগ্রেসের দিকে। যাতে বোঝানো যায়, কংগ্রেসের উদ্যোগে বৈঠক হলে তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয় না। নীতিশের বৈঠকের আগে আপের তরফ থেকে ও পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে মমতাকে। এমনকী দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার অপরাধে ১৩ জন আপ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুপারিশ করে ‘আপ’।

এদিকে আবার পটনার বৈঠকের আগেই তৃণমূল, আম আদমি পার্টি (আপ), সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র মতো দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, জাতীয় স্তরে বিজেপির মোকাবিলায় মমতার ‘তত্ত্ব’ সমর্থনের ইঙ্গিত দিতে দেখা গেছে এসপি সভাপতি অখিলেশ যাদব, আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। এই পরিস্থিতিতে পটনায় জেডিইউ নেতা নীতিশের ডাকা বৈঠকে অখিলেশ, কেজরিওয়ালের পাশাপাশি হাজির থাকার কথা রাহুল গান্ধি এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেরও। এমন এক আবহে মমতার সঙ্গে তৃণমূলের পরবর্তী প্রজন্মের নেতা অভিষেকের উপস্থিতিতে বিষয়টি ‘অন্য মাত্রা’ পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আসন্ন পটনা বৈঠকে মমতার সঙ্গে অভিষেকেরও যোগদানের সিদ্ধান্তকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, মমতার এই সিদ্ধান্তে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী সমীকরণে তৃণমূলের ‘মুখ’ হিসাবে অভিষেকের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হল। পাশাপাশি, ঘটনাচক্রে, বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই বিভিন্ন দলের মধ্যে মতানৈক্যও শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেস বনাম তৃণমূলের সংঘাত তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক টানাপোড়েনের এই পরিস্থিতিতে পটনা বৈঠকে হাজির হওয়ার সুযোগ জাতীয় রাজনীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে অভিষেককে নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ দেবে বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এরই পাশাপাশি জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী দলগুলির সমঝোতাকে যে তৃণমূল সুপ্রিমো যে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন, পটনার বৈঠকে অভিষেককে সঙ্গী করে সেই বার্তাও দিলেন মমতা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × four =