রাহুলের সঙ্গে বৈঠক অভিষেকের, তৈরি হল ভবিষ্যতের কর্মপন্থা

মুম্বইয়ে যখন রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে, তখন রাজধানীতে হয়ে গেল আর এক ‘গোপন’ বৈঠক। মমতার মুম্বই যাত্রার ঠিক একদিন আগে দিল্লি যান তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এর ঠিক পরের দিন অর্থাৎ বুধবার ভোরে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধির সঙ্গে একান্ত বৈঠক সারলেন অভিষেক। কী এমন কথা হল তা নিয়ে কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটেছে দু পক্ষই। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারনা, জোট-অঙ্কের কিছু সমীকরণ মেলাতেই মুখোমুখি হন তাঁরা।

প্রসঙ্গত, এই ১০ জনপথের এই বাড়িতে বসেই বহু যুদ্ধের কৌশল তৈরি হয়েছে। কীভাবে দেশ চলবে, সেই নীতি নির্ধারণ হয়েছে। এবার সেই ১০ জনপথেই সম্ভবত আগামী দিনের রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রক্রিয়াটাও শুরু হয়ে গেল প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধির সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠককে কেন্দ্র করেই।

রাহুল এবং অভিষেক জাতীয় রাজনীতিতে উদীয়মান নেতা। সূত্রের খবর, বুধবার কাকভোরে ১০ জনপথে রাহুল গান্ধি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেখা করেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক কথা হয় তাঁদের। অতীতে অভিষেক রাহুলের বিজেপি বিরোধিতার সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। গত বছর মেঘালয়ে দাঁড়িয়ে রাহুলও তৃণমূলকে বিঁধেছেন, বিজেপির ‘বি টিম’ হিসাবে। সেসব ভুলে ইন্ডিয়া জোটের ঠিক আগে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দুই নেতার এই বৈঠক বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে এটা বলাই যায়। তবে ঠিক কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেটা স্পষ্ট না হলেও, রাজ্য রাজনীতিতে আগামী দিনে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সমীকরণ এই বৈঠকের পর বদলে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, বাংলার মাটিতে তৃণমূল ও কংগ্রেসের সমীকরণ কী হবে, তা নিয়েই আলোচনা করে থাকতে পারেন দুই নেতা। একদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এখনও মমতা সরকারের বিরোধিতায় অনড়। বামেরাও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে জাতীয় রাজনীতিতে যাই হোক না কেন, বাংলায় তৃণমূলের হাত ধরার কোনও প্রশ্নই উঠছে না। কংগ্রেস শিবিরের অন্দরের খবর, লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৫টি আসনে সমঝোতা চাইছে। কিন্তু সেই আসন ছাড়তে নারাজ তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গও এই বৈঠকে উঠে আসা অসম্ভব কিছুই নয়।

এদিকে, সংখ্যালঘু ভোট ফ্যাক্টরও এই বৈঠকের কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বাম ও কংগ্রেস দুই শিবিরই যদি তৃণমূলের বিরোধিতা করে, তাহলে সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর তা তৃণমূলের জন্য খুব একটা ভাল হবে না। প্রশ্ন উঠছে, সে কারণেই কি তৃণমূল এবার কংগ্রেসকে পাশে চাইছে, যাতে সেই ভোটব্যাঙ্কের কিছু অন্তত নিজেদের হাতেই রাখা যেতে পারে?

এই গোপন বৈঠক নিয়ে ধোঁয়াশা ছিলই।রয়েছে জল্পনাও। তবে এটুকু স্পষ্ট যে ইন্ডিয়া জোটকে এগিয়ে রাখতেই সমীকরণের হিসেব-নিকেশ করেছেন রাহুল ও অভিষেক। একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এবার মমতার পরবর্তী প্রজন্ম অভিষেকের সঙ্গে রাহুলের বৈঠক কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে নতুন করে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার সোপান হতেই পারে। সেটা হলে জাতীয় এবং রাজ্য রাজনীতি, দুই ক্ষেত্রেই বড়সড় বিপ্লব আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − two =