তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কলকাতা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ তুলে তাঁর সাংসদ পদ খারিজের আবেদন জানিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তাঁর মতে, ভারতের গণতন্ত্র দাঁড়িয়ে রয়েছে বিচারব্যবস্থার উপর। সেই বিচারব্যবস্থাকে আঘাত করতে চাইছেন অভিষেক। এখানেই শেষ নয়, পাশাপাশি, অভিষেককে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানান সৌমিত্র। তিনি বলেন, ‘এক জন সাংসদ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বলবেন, আমি হলে গুলি চালিয়ে দিতাম! কখনও কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে যা খুশি বলবেন। এতে ভারতের গণতন্ত্র ভেঙে পড়বে।’ তাঁর মতে, ভারতের গণতন্ত্র দাঁড়িয়ে রয়েছে বিচারব্যবস্থার উপর। তাই এ ধরনের কথা বলার আগে ভাবা উচিত। সঙ্গে সৌমিত্র এও বলেন, ‘স্পিকারের কাছে অনুরোধ, যে ব্যক্তি এ ধরনের কথা বলেন, তাঁকে সাসপেন্ড করা উচিত।’আগামী সোমবার এ নিয়ে এফআইআর দায়েরও করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায় সৌমিত্রকে। এদিকে বসে নেই জোড়াফুল শিবিরও। তৃণমূল পাল্টা সৌমিত্রের অতীত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শাসকদলের মতে, জেলাশাসক এবং শীর্ষ আধিকারিকদের তুইতোকারি করে কথা বলা সৌমিত্র যদি সংবিধান বাঁচাতে নামেন, তাতে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
এদিকে শুক্রবারে করা অভিষেকের বক্তব্য নিয়ে সরব আইনজীবী মহলের একাংশ।তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত চাইলে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে শাস্তি দিতে পারে বলেও জানান অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আদালত সম্পর্কে কোনও ব্যক্তি এই বক্তব্য রাখেন তাহলে সমালোচনা হতেই পারে আদালতের। তবে কোর্ট যদি মনে করে ওই বক্তব্য থেকে এমন কোনও কথা উঠে আসছে যা ‘ইন্টারফেয়ারেন্স উইথ দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস’ অথবা কোনও ‘স্কারিলার্ক রিমার্ক’ তাহলে এটা ‘ক্রিমিনাল কন্টটেম্পট অব কোর্ট’ হবে কি না সেই বিষয়ে দেখা হয়।’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এক্ষেত্রে আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করতে পারে বা কেউ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর অপরাধ প্রমাণিত হতে আদালত শাস্তি, জরিমানা করতে পারে।
এদিকে অভিষেকের এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘মুর্খের প্রলাপ। প্রশাসনকে আদালত তার কাজে বাধা দেয়নি। আইনসঙ্গত অবস্থায় কাজ করতে না পারলে আদালত বাধা দেয়।’ এরপর নাম না করে অভিষেককে বিঁধে বলেন, ‘যিনি এই কথা বলেছেন তিনি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি সুপ্রমিকোর্টে বারবার গিয়েছেন রক্ষাকবচের জন্য। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তারপর রক্ষাকবচ পাননি। আর রক্ষাকবচ পাননি বলেই নিজের ব্যথা প্রকাশ করলেন।’
ফলে এমনটা অনেকেই আঁচ করছেন যে অদূর ভবিষ্যতে আইনজীবীদের একাংশ অভিষেকের বক্তব্য নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। প্রসঙ্গত, এর আগেও এই বিষয়ে যখন আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল তখন বিচারপতিরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে সংবিধানে রাজনীতি এবং বিচারব্যবস্থা দুটি পৃথক অংশ। সেক্ষেত্রে তাঁরা যাতে একে অপরকে দোষারোপ না করে সেই বিষয়টি যেন উভয় পক্ষই মাথায় রাখেন।