কুমোরটুলি ঘাটের সংস্কারে হাত দিতে চলেছে আদানি গোষ্ঠী। কারণ, বছর বছর ধরে গঙ্গার ধারে ইতিহাসের কত ঘটনার বাহক এই ঘাটটি। কিন্তু সাধারণের যাওয়ার জন্য কার্যত অনুপযোগী। বর্ষাকালে তো আবার প্রাণ হাতে নিয়ে সেখানে যাতায়াত করেন স্থানীয়রা। এবার সেই কুমোরটুলি ঘাটের রূপ ফেরানোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিল আদানি গোষ্ঠী। শুক্রবার এই বিষয়ে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ (শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট)–এর সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করেছে আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জ়োন লিমিটেড (এপিএসইজ়েড)। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, স্থানীয় থেকে পর্যটকরা যাতে প্রত্যেকেই নিরাপদে এই ঘাটে চলা ফেরা করতে পারেন, সেই বিষয়টাকেই সুনিশ্চিত করতে এই কাজ নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
কারণ, এই ঘাট–সংলগ্ন কুমোরটুলি এবং সেখানকার প্রতিমা নির্মাণ–শিল্পও কয়েকশো বছর ধরে কলকাতার স্থানীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছে। অবশ্য গত বেশ কয়েক বছর ধরে এই কুমোরটুলি ঘাটের অবস্থা ক্রমশ সঙ্গিন হয়েছে।
বছরের পর বছর গঙ্গার জলে ঘাটের ক্ষয় এবং একই সঙ্গে স্থানীয়দের উদাসীনতায় যে ভাবে এই ঘাট ও সংলগ্ন এলাকায় জঞ্জাল জমেছে, সেটাও রীতিমতো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় এই ঘাটের সংস্কার এবং পরিচ্ছন্নতা — দু’য়েরই প্রয়োজন। ঘাট রক্ষা ও সংস্কারের জন্যে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরকে ‘পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপ’–এর গুরুত্বপূর্ণ নজির বলেই মনে করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা বন্দরের চেয়ারপার্সন রথেন্দ্র রমণ বলেন, ‘এটা নিছক একটি সংস্কার কর্মসূচি নয়। এটাকে শুধু কোনও পুনঃস্থাপন বা পুনরুদ্ধার প্রকল্প হিসাবেই আমরা দেখছি না। বরং বাংলার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে তোলার একটা মাধ্যমও।’
এপিএসইজেড–এর পক্ষ থেকে সংস্থার বিজ়নেস ডেভলপমেন্ট বিভাগের প্রেসিডেন্ট সুব্রত ত্রিপাঠী বলেন, ‘কলকাতার মানুষের সঙ্গে এই ঘাটের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। এমন একটি ঘাট সংস্কারের দায়িত্ব পেয়ে আমরা অত্যন্ত সম্মানিত।’ জানা গিয়েছে, এই সংস্কারের কাজ কলকাতা বন্দরের আওতাভুক্ত জমিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
তবে এই কালীঘাটের পরে কুমোরটুলি নিয়ে এই উদ্যোগে জ্ন্ম দিল নয়া এক জল্পনার। প্রশ্ন উঠে গেল, কলকাতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত এবং বাঙালিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্কগুলির সংস্কারে এবার বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী যুক্ত হওয়া শুরু করল কিনা তা নিয়ে।