কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের ওপর ক্ষুব্ধ অধীর, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানালেন তাঁর বার্তা

কংগ্রেস হাইকমান্ডের উপর ক্ষুব্ধ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। দিল্লির বৈঠকে তাঁকে ‘প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি’ বলে মন্তব্য করতেই প্রচণ্ডই ক্ষুব্ধ হন তিনি। এই ক্ষোভ গিয়ে পড়ে এআইসিসি পর্যবেক্ষক গোলাম মীর থেকে শুরু করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ওপর। এরপরই মধ্যে মঙ্গলবার রাত্রিবেলা নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন অধীর। উগরে দেন রাগের কথা। পরিষ্কার বলেন, ‘অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে শিখিনি, করবোও না।’

বরাবরই দলের কর্মীদের পাশে থাকতে দেখা গিয়েছে প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতাকে। এ দিনও কংগ্রেস কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের ‘অত্যাচারের’ কথা তুলে ধরেন তিনি। বলা চলে সরব হন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফেসবুকে অধীর লেখেন, ‘আমাদের লোকদের মারছে, যে কর্মীরা রাতদিন তৃণমূলের হাতে মার খেলো,খাচ্ছে, তাদের জন্য আমরা বলবো না তো কে বলবে ?’ একইসঙ্গে অধীরের অভিযোগ, ‘শাসক তৃণমূল আমাদের দল ভাঙছে প্রতিদিন! ওরা তো ইন্ডিয়া জোটে সামিল হয়ে আমাদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করেনি।’ এরপরই তিনি এ প্রশ্নও তোলেন, ‘তৃণমূল তো এ রাজ্যের শাসক দল,তারা কি আমাদের কংগ্রেস কর্মীদের কোনও রকম রেহাই দিয়েছে? আজও জেলে বন্দি আমাদের কর্মী,মিথ্যা মামলায় জর্জরিত,আমাদের পার্টি অফিস দখল করেছে। বিরাম নেই।’ আর এখানেই কংগ্রেস নেতার প্রশ্ন, ‘তাহলে সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কীভাবে চুপ করব? করলে আমার সেই সহকর্মীদের প্রতি অবিচার অন্যায় করা হবে! আমি পারব না।’

অধীরের কথায়, যে কর্মীরা রাতদিন লড়াই করেছেন,দলের পতাকা নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করছেন, তাঁদের সঙ্গেও দিল্লি কথা বলুক। তাঁদের মতামতও জানা দরকার। তাঁদেরও দিল্লিতে ডাকা দরকার। এই প্রসঙ্গে অধীরের স্পষ্ট বার্তা, ‘আমি আমার সেই সকল সহকর্মীদের সঙ্গে রাস্তায় থাকব। আন্দোলনের পথে,অন্যায়ের সাথে আপোস করতে শিখিনি,করবও না।’

বস্তুত অধীরের সঙ্গে কংগ্রেস হাইকমান্ডের ‘বিরোধ’ নতুন কোনও ঘটনা নয়। এবারের লোকসভা ভোটের সময় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলায় তাঁদের রাজনৈতিক রূপরেখা কী হবে তা নিয়ে দ্বন্দ্বে ছিল। যে সময় ইন্ডিয়া জোটের সলতে পাকছিল, সেই সময় বাংলায় অধীর তৃণমূল বিরোধিতায় সুর চড়িয়ে গিয়েছেন। সোজা কথায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, গোটা দেশে কী হবে জানা নেই বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট হবে না। বলেছিলেন, ‘আমি পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে বলছি আমাদের লড়াই রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে গোটা দেশে বিজেপির সঙ্গে।’ তবে জোটের স্বার্থে কংগ্রেস হাইকমান্ডকে দেখা যায় তৃণমূলের প্রতি কিছুটা হলেও ‘নরম’। রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় তৃণমূল তীব্র আক্রমণ করলেও জয়রাম রমেশরা হালকা ভাবে ডিফেন্স করেছেন। তবে অধীর কিন্তু ছেড়ে কথা বলেননি। চাগিয়ে খেলেছেন। বারবার আক্রমণ করে বলেছেন মমতার ইন্ডিয়া জোটে থাকা না থাকার কথা নিয়ে। যা নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে প্রকাশ্য বৈঠকেই সমঝে চলার বার্তা দেন। বলেন, ‘অধীর চৌধুরী কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কংগ্রেস দল আছে, হাইকমান্ড আছে। আমরা যা সিদ্ধান্ত নেব, সেটাই হবে।’ এরপর নির্বাচন হয়। বহরমপুরে তৃণমূলের কাছে পরাজিত হন অধীর। তারপর আবার প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলে সম্বোধন। যা অধীরের আঁতে ঘা লাগার জন্য যথেষ্ট বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − 1 =