দেউচা পাচামি এলাকায় পুলিশ এবং প্রশাসনের জুলুম বন্ধ করতে হবে। জোর করে উচ্ছেদ করা যাবে না। কয়লা প্রকল্পের নামে কর্পোরেটের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট বন্ধ করতে হবে, এমন দাবি সামনে রেখে শুক্রবার সিউড়িতে দেখানো হবে বিক্ষোভ। দাবি জানানো হবে জেলা প্রশাসনের কাছেও।
বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে এই কর্মসূচি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চ, পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চ, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী ও লোক শিল্পী সঙ্ঘ।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে দলিত শোষণ মুক্তি মোর্চার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম এমনই বার্তা দেন। সঙ্গে এও বলেন, ‘রাজ্য প্রশাসন এবং মাফিয়ারা সব প্রতিবাদকে স্তব্ধ করতে চেষ্টা করছে। কয়লা তোলা হবে না। তার নাম করে ব্যাসল্ট, গ্রানাইট তুলে রপ্তানি করবে আদানি গোষ্ঠী। আদাবাসীদের, এলাকারা বাসিন্দাদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে এই লুট প্রতিবাদহীন। বাস্তব মোটেই তা নয়।’
পাশাপাশি সংগঠনের তরফ থেকে এও জানানো হয়, ১১ এপ্রিল সিউড়ি বেণীমাধব ইনস্টিটিউটের মাঠের সামনে সকাল ১১ টায় সমাবেশ হবে বলে জানিয়েছেন তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবাদও জানানো হবে।
এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের সম্পাদক অলকেশ দাস, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কেও। বক্তব্য রাখতে গিয়ে, তাঁরা জানান, ‘সবাই জেনেছে দেউচা পাচামী কয়লা খনি প্রকল্প বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকে করা হচ্ছে। ১১টি গ্রামের ২১ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন। পার্শ্ববর্তী ৭০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা, পরিবেশ বিপন্ন হবে। এইসব জমির বেশিরভাগ আদিবাসীদের। খনি প্রকল্পের ১১,২২২ একর জমির মধ্যে ৯১০০ একর জমি আদিবাসীদের।
ডোম বলেন, ‘২০১৩’র জমি অধিগ্রহণ আইন লঙ্ঘন করে কাজ চলছে। বাসিন্দাদের সম্মতির চেষ্টাই করা হয়নি। প্রতিবাদ দমাতে পুলিশি অত্যাচার চরমে উঠেছে। মোট জমির ৭০ শতাংশ সাধারণ মানুষের। ২০ শতাংশ সরকারের। ৬ শতাংশ বনভূমি। এইসব অনিচ্ছুক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে, জীবন জীবিকার সর্বনাশ করে শুধুমাত্র আদানি শিল্পপতির স্বার্থ রক্ষা করার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করে এই কয়লা খনি প্রকল্প করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে এর প্রতিবাদে এগিয়ে আসতে হবে।’
এই প্রসঙ্গে অলকেশ দাস বলেন, ‘প্রকল্পটি লাভজনক হতে পারে না বিবেচনা করে কোল ইন্ডিয়া পর্যন্ত সরে গিয়েছে। তবু আদানি গোষ্ঠীর স্বার্থে এত তৎপর রাজ্য।’ পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস কর্পোরেট বন্ডে লাভবান রাজনৈতিক দলগুলির তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে। তার সঙ্গে তৃণমূলের এই তৎপরতার সরাসরি যোগ রয়েছে।’
পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, ‘রাজ্য সরকার প্রকল্প সম্পর্কে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশ করছে না। পরিবেশ সম্পর্কিত রিপোর্ট জানানো দরকার। ২১ হাজার মানুষ সরাসরি আক্রান্ত হবেন। বনাঞ্চল রয়েছে, আদিবাসী মানুষ রয়েছেন। ১২ হাজারের বেশি তপসিলি এবং আদিবাসী। কর্মসংস্থানের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জীবনযাত্রা, পরিবেশ সম্পর্কে বিশদ কথা নেই। সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করছে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার যৌথভাবে।’