আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণ–খুনের ঘটনা এবং ‘থ্রেট কালচার’-এর বিরুদ্ধে ফের পথে নামতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ৯ অগাস্ট নির্যাতিতার মৃত্যুর এক বছর। সেই দিনই ফের রাত দখলের ডাক দিয়েছেন প্রতিবাদী চিকিৎসকরা।
৮ ও ৯ অগাস্টের মাঝে ‘রাত দখল’-এর ডাক দেওয়া হয়েছে। ৮ অগাস্ট রাত ১২টা থেকে পরের দিন ভোর ৪টে পর্যন্ত পথে নামবেন তারা। হবে মশাল মিছিল। আর এই মশাল মিছিল হবে কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত। শিল্পী থেকে নাগরিক সমাজ – সকলকে সেই মিছিল এবং কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। এই কর্মসূচিতে নানাভাবে এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হবেন সমাজে রসর্বস্তরের মানুষ।
৯ অগাস্ট রাখী। সেদিন সকালে রাখীবন্ধনের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা ছড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের। পরে বিকেলে আরজি কর মেডিক্যালে ফের জমায়েতে ডাক দিয়েছেন তাঁরা। জুনিয়র ডাক্তারদের স্পষ্ট বার্তা, ‘থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সবাইকে রাস্তায় নামতেই হবে। আমরা চাই শুধু চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী নন, সাধারণ মানুষ, সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষও যেন এই প্রতিবাদে সামিল হন।’
এর পাশাপাশি নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে অভয়ার বাব–মা। আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে আগামী ৯ অগাস্ট, শনিবার। তবে এবারও এই আন্দোলনের পুরোভাগে থাকতে চলছে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ।এর আগে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে গতবছর নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ। ধুন্ধুমার ঘটনা ঘটেছিল সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল।
গতবছর ২৭ অগাস্ট আরজি কর কাণ্ডের বিচার চাইতে যে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ তাতে তোলপাড় হয় কলকাতা–হাওড়া।ওই অভিযানের পিছনে ছিল গেরুয়া শিবির, এমনটাই দাবি করা হয় তৃণমূলের তরফ থেকে। এবারও সরাসরি নবান্ন অভিযানকে সমর্থন করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। পুলিশও আন্দোলন মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের বড় কর্তারা রাস্তা পরিদর্শন করে অভিযান রোধের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন।
এদিকে নবান্ন অভিযানের প্রস্তুতি চলছে রাজ্যজুড়ে। গতবার হঠাৎ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলেও এবার অনেক আগেই অভয়ার বাবা–মা নবান্ন চলোর ডাক দিয়েছেন। তৃণমূল ছাড়া সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানিয়েছেন ওই আন্দোলনে অংশ নিতে। বিভিন্ন থানা থকে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের বেশ কয়েকজনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সূত্রে খবর, এই অভিযানের আগে গতবারের আন্দোলনের অন্যতম মুখ সায়ন লাহিড়ীও নোটিশ পয়েছেন। গতবার তার মামলা গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সায়ন লাহিড়ী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের বেশ কয়েকজনকে পুলিশ নোটিশ পাঠিয়েছে। অভয়াদির বাবা–মায়ের পিছনে রয়েছে ছাত্র সমাজ। নবান্ন অভিযানে এবারও স্তব্ধ হবে কলকাতা ও হাওড়া। ডোরিনা ক্রশিং ও সাতরাগাছি থেকে মিছিল আসবে। আর এবার অভয়াদিদির বাবা–মায়ের ডাকে নবান্ন অভিযান হচ্ছে। এই আন্দোলন শুধু ছাত্র সমাজ নয়, বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দল বা নেতার নয়। রাখীবন্ধনের অঙ্গীকার নিয়ে অভয়াদির বিচারের জন্য পা মেলাতে আহ্বান জানানো হচ্ছে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে। ওই দিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হবে। অভয়াদির বাবা–মা যেভাবে আন্দোলন পরিচালনা করবে সেভাবে হবে। যদি প্রশাসন আগের বছরের মতো মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে বিনাপ্ররোচনায় অভয়াদির বাবা–মায়ের ওপর জলকামান বা লাঠি পড়ে, তাহলে তার পরের দায়িত্ব সম্পূর্ণ পুলিশ প্রশাসনের থাকবে। সুষ্ঠুভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন বজায় রাখার দায়িত্ব পুলিশের। আন্দোলনকারীরাও শান্তি চাইছে।’