২৫ বছর পর হলেও অবশেষে নিজের দোষ স্বীকার করল পাকিস্তান। স্বীকার করল, ভারতের সঙ্গে তারা অন্যায় করেছিল। আর এই দোষ স্বীকার করলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ স্বয়ং। মঙ্গলবার নওয়াজ স্বীকার করেন যে ১৯৯৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে লাহোর চুক্তি হয়েছিল, তা ভাঙে পাকিস্তানই। কার্গিলের যুদ্ধও যে পারভেজ মুশারফের কারণেই হয়েছিল, তাও এদিন একরকম স্বীকার করে নিতে দেখা যায় প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীকে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষার ২৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে পিএমএল-এন সভায় জনগণকে ভাষণ দিতে গিয়েই ভারতের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গের প্রসঙ্গ তোলেন নওয়াজ শরিফ। তিনি জানান যে ১৯৯৯ সালের লাহোর চুক্তি, যা ভারতের তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন, তা আসলে পাকিস্তানই ভেঙেছিল। সঙ্গে নওয়াজ শরিফ এও জানান, ‘১৯৯৮ সালের ২৮ মে, পাকিস্তান পাঁচটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল। এরপর বাজপেয়ী সাহেব এখানে আসেন এবং আমাদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। কিন্তু আমরাই ওই চুক্তি ভেঙেছিলাম। ওটা আমাদের ভুল ছিল।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই পড়শি দেশের মধ্যে শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য লাহোর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এর কয়েক মাস পরেই, ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান জম্মু-কাশ্মীরের কার্গিল প্রদেশে অনুপ্রবেশ করে এবং তা দখল করার চেষ্টা করে, যার জেরে কার্গিলের যুদ্ধ শুরু হয়। সেই সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। সেনা জেনারেল ছিলেন পারভেজ মুশারফ। যুদ্ধে ভারত জয়ী হয়।
শরিফের এই স্বীকারক্তি পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে সম্প্রচার হতেই তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ওই ভিডিয়োয় প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীকে আরও বলতে শোনা যায় যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পাকিস্তানকে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো বন্ধ করতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। নওয়াজ বলেন, ‘আমার জায়গায় ইমরান খানের মতো একজন থাকলে তিনি ক্লিনটনের প্রস্তাব মেনে নিতেন।’
৭২ বছর বয়সী নওয়াজ শরিফ আরও বলেন যে কীভাবে তাঁকে ২০১৭ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসার একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন যে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া সমস্ত মামলা মিথ্যা। বরং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলাগুলি সত্য।
নওয়াজ শরিফ তাঁর ছোট ভাই ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘শাহবাজ প্রতিটি দুঃসময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু শাহবাজ আমার প্রতি অনুগত ছিল। এমনকী, আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে শাহবাজকে অতীতে প্রধানমন্ত্রী হতেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ও সেই প্রস্তাব প্রত্য়াখান করে।’