দেবাশিসের পর অনিকেত-আশফাকুল্লাহ, বদলে গেল পোস্টিং, প্রতিবাদ স্বাস্থ্য়ভবনে

আরজি করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত। সেই ঘটনা এখনও ভুলতে পারেননি শহরবাসীর এক বিরাট অংশ। এক মহিলা চিকিৎসকের এমন নির্মম পরিণতি ভোলার কথাও নয়। শুধু তাই নয়, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আরজি করের নানা অনৈতিক ঘটনাও সামনে আসতে থাকে। যার সঙ্গে কোথাও পরোক্ষে জড়িয়ে যায় আরও বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজের নাম। এবার সেই ঘটনায় যে প্রতিবাদ উঠেছিল চিকিৎসক মহল থেকে তারই অগ্রভাগে থাকা তিন চিকিৎসক এবার আনলেন বিস্ফোরক অভিযোগ। বিশেষ কোনও কারণ ছাড়াই বদল করা হচ্ছে তাঁদের পোস্টিং!
এ ব্য়াপারে সবার আগে কোপ পড়ে চিকিৎসক দেবাশিস হালদারের ওপর। এবার সেই একই অভিযোগ তুললেন অনিকেত মাহাতো ও আশফাকুল্লাহ নাইয়া। কাউন্সেলিং হওয়ার পরও তাঁদের এবং শুধুমাত্র তাঁদেরই পোস্টিং বদলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে আরও একটা তথ্য দিয়ে রাখা প্রয়োজন। তা হল, অনিকেত ও আশফাকুল্লাহ এতদিন পিজিটি ছিলেন। এবার সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করবেন তাঁরা। সেই কারণে পোস্টিং দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিং হয় তাঁদের। সেই কাউন্সেলিং অনুযায়ী আশফাকুল্লাহর পোস্টিং ছিল আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ। আর অনিকেতের পোস্টিং ছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু মেরিট লিস্ট প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যায়  অনিকেত মাহাতোকে রায়গঞ্জ ও আশফাকুল্লাহকে পুরুলিয়ায় পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, ওই লিস্টে ৮৭১ জনের নাম রয়েছে। শুধুমাত্র ওই দুজনের সঙ্গেই এই ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, লিস্ট পৃথক হলেও দেবাশিসের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। কাউন্সেলিং-এ তাঁকে হাওড়ায় পোস্টিং দেওয়ার কথা বলা হলেও পরে মেরিট লিস্টে দেখা যায় তাঁর পোস্টিং মালদহের গাজোলে। সেই হাসপাতালে কোনও শূন্যপদ ছিল না। তা সত্ত্বেও কীভাবে দেবাশিসকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন।
এই ইস্যুতে কার্যত তোলপাড় শুরু হয় রাজ্যে। এদিন প্রথমে স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে স্বাস্থ্যসচিবের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ডাক্তাররা। পরে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি করেন তাঁরা। কিন্তু দেখা যায়, তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেই গাড়ি করে বেরিয়ে যান নারায়ণ স্বরূপ নিগম। তারপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন জুনিয়র ডাক্তাররা। স্বাস্থ্যভবনের ভিতরেই মূল গেটের সামনে শুরু হয় তাঁদের অবস্থান। অনিকেত মাহাতো জানান,’চিকিৎসক হিসেবে আমরা কখনওই বলছি না যে আমরা দায়িত্ব পালন করব না। কিন্তু প্রশ্ন হল, কাউন্সিলিংয়ের সময় আমাদের যে অ‍্যাপয়েনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল, তা হঠাৎ বদলে ফেলা হল কেন? স্বাস্থ‍্য ভবনের কর্তাদের দাবি, সরকারের কনফিডেন্সিয়াল অর্ডারের পর এই বদল হয়েছে। কিন্তু আমরা জানতে চাই এই অর্ডার কি? আমাদের তা জানানো হোক। আমরা বাংলার যে-কোনও প্রান্তে কাজে যোগ দিতে পারি। কিন্তু তার আগে আমাদের জানাতে হবে, এই বদল কেন ? আর তা কী শুধু তিন জনের ক্ষেত্রেই? তাহলে কি আরজি করের নির্যাতিতার জন্য আন্দোলনের জেরেই এই প্রতিহিংসাপরায়ণ নীতি?’ সঙ্গে হুঁশিয়ারির সুরেও জানান প্রয়োজনে আইনি পথে এগোতে পারেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × five =

preload imagepreload image