রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধ’-এ ইতি পড়তেই দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ শহর ছাড়তে শুরু করেছে ভাড়াটে সেনা ‘ওয়াগনার গ্রুপ’। সূত্রে এ খবরও মিলছে, বাহিনী নিয়ে প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে পাড়ি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘নিজস্ব ফৌজ’-র প্রধান অলিগার্চ ইয়েভজেলি প্রিগোজিন। তাঁরা শহর ছাড়তেই সেখানে ঢুকে পড়ে রুশ পুলিশের বিশাল বাহিনী। কিন্তু উর্দিধারীদের দেখে স্বস্তি পাওয়া তো দূরে থাক, রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় শহরবাসীকে।
শনিবার হঠাৎ করে বিদ্রোহী হয় রুশ ভাড়াটে সেনা ‘ওয়াগনার গ্রুপ’। রোস্তভ শহরের দখল নেন বাহিনীর প্রধান প্রিগোজিন। সেখানকার সেনা সদরও দখল করেন। ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি থেকে শুরু করে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শহরের রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে বিদ্রোহীরা। আর এখানেই রোস্তভবাসীর অভিযোগ, ওই সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনও চেষ্টাই করেনি স্থানীয় পুলিশ। ওয়াগনার প্রধানের সঙ্গে কথাও বলেননি তাঁরা। উলটে বিদ্রোহীদের দেখেই ল্যাজ গুটিয়ে সেখান থেকে চম্পট দেন সকলে। ওয়াগনার গ্রুপ শহর ছাড়তেই ফের রোস্তভে ফিরে আসেন তাঁরা। শনিবার রাতে এই ঘটনা ঘটতেই রাশিয়ান পুলিশদের ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। এদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশের গায়ে থুতুও ছেটান বলে খবর। রবিবার সকাল পর্যন্ত চলে ওই বিক্ষোভ। উল্লেখ্য, পুতিনের নিজস্ব বাহিনী হিসেবে পরিচিত এই রুশ ভাড়াটে সেনার বিরুদ্ধে নির্বিচারে খুন ও ধর্ষণের মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এদিকে রোস্তভবাসীর বক্তব্য, শনিবার একরকম পণবন্দি অবস্থায় ছিলেন তাঁরা। সেই সময় কেন তাঁদের ছেড়ে চম্পট দিল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোভরত এলাকাবাসী।
তবে কেন হঠাৎ করে বিদ্রোহী হল ওয়াগনার গ্রুপ এই প্রসঙ্গে প্রিগোজিনের অভিযোগ, ইউক্রেনের রণাঙ্গনে তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধেই রকেট হামলা চালিয়েছে রুশ সেনা। আর তাতে প্রাণ হারান দু’হাজারে বেশি ভাড়াটে সৈনিক। এর জন্য রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে পুরোপুরি দায়ী করেন তিনি। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর তরফে পর্যাপ্ত অস্ত্র ও গোল-বারুদ সরবরাহ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন প্রিগোজিন। এরপর শনিবার রাশিয়ার এই ভাড়াটে সেনার দল যখন রাজধানী মস্কোর দিকে ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করে তখনই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। ওয়াগনার প্রধানকে সমঝোতায় রাজি করান তিনি। এর পরই ভাড়াটে ফৌজকে ব্যারাকে ফেরার নির্দেশ দেন প্রিগোজিন। এই ইস্যুতে বিবৃতিও দেয় প্রেসিডেন্ট পুতিনের দফতর। সেখানে ওয়াগনার প্রধান ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রককেও বড় রদবদল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সরকারিভাবে তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।