তৃণমূল সুপ্রিমোর কড়া বার্তার পরই ভোলবদল স্বপনের

বুধবার সকাল থেকেই বঙ্গ রাজনীতির চর্চায় ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন। তৃণমূলের হাওড়ার প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্দল হয়ে ভোটে লড়াই করার বার্তা দিয়েছিলেন। আর এই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। অভিযোগ ছিল, বারবার আশ্বাস দিলেও দল তাঁকে গুরুত্ব দেয়নি। বাবুন এও বলেন, ‘দিদির যাঁরা বেশি কান ভাঙায় তাঁদের মধ্যে অনেকেই টিকিট পেয়েছেন।’ এই সব বিতর্কের মধ্যেই ফের বিস্ফোরক স্বপন। জানান, হাওড়া থেকে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়তে চাইছেন। একই সঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায় তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও।একইসঙ্গে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এও জানান, ‘আমি হাওড়া থেকে নির্দল হয়ে দাঁড়াতে চাইছি। তাও আমি দিদির সঙ্গে আলোচনা করব। দিদি যা বলবেন আমি অক্ষরে-অক্ষরে পালন করব।’ তবে ছবিটা বদলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় স্বপনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলতেই। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পরিবার তন্ত্রে তিনি বিশ্বাস করেন না। দল যাঁকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করেছে, তিনিই থাকবেন। দলের সিদ্ধান্ত সর্বোপরি। এরপরই তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি।

এদিকে সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা দেখেই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। অভিযোগ, প্রসূনবাবুর সঙ্গে হাওড়ার সাধারণ মানুষের সংযোগ নেই। এই নিয়ে প্রায়শই নাকি তাঁকে অভিযোগ শুনতে হয়। সাধারণ মানুষ থেকে মন্ত্রী–সকলেই ফোন করে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এরই রেশ ধরে স্বপন এও বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে চেয়েছিলাম উনি যেন হাওড়ায় প্রার্থী না হয়। অন্য যে কেউ হতে পারেন। ওইখানে তো অনেক ভাল ভাল মানুষ রয়েছেন। জনসংযোগ বিহীন সাংসদ না হওয়াই পার্টির পক্ষে ভাল। আমরা তৃণমূল কংগ্রেস দলটা করি তো তাই বুঝি।’ এখানেই শেষ নয়। তিনি কটাক্ষ করে এও জানান, ‘জনসংযোগ বিহীন মানুষের ভোট পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়। হাওড়ার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। ওইখানের সকলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল। অরূপ রায়, প্রিয়া পাল, কৈলাস মিশ্র অনেকেই আমায় অভিযোগ করেছেন।’

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে কালীঘাটের ৩০বি হরিশ চ‌্যাটার্জি স্ট্রিট ছেড়ে হাওড়ার শিবপুরের ভোটার তালিকায় নাম তোলেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ই কার্যত তিনি জানিয়েছিলেন, হাওড়াবাসীর পাশে তিনি থাকতে চান। দল প্রার্থী করলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মসূচিকে সামনে রেখে এগিয়ে যাবেন। কিন্তু এবারও তা না হওয়ায় অভিমানী মমতার ছোট ভাই। বস্তুত, প্রসূন ও স্বপনের এই দ্বন্দ্ব নতুন নয়। পিছিয়ে যেতে হবে কয়েক চার-পাঁচ বছর আগে। সেই সময় মোহনবাগান ক্লাবের জেনারেল মিটিং চলার সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময় জীবিত ছিলেন প্রাক্তন সচিব অঞ্জন মিত্র। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী আড়াআড়ি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদিকে টুটু বসু অন্যদিকে অঞ্জন মিত্র। সেই মিটিংয়ে প্রকাশ্য মঞ্চেই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ঝামেলা বাধে। দু’জনই মাইক নিয়ে মঞ্চে বক্তৃতা দেন। ক্ষোভ উগরে দেন একে অপরের বিরুদ্ধে। তবে তৃণমূল সুপ্রিমোর কড়া বার্তাতেই ভোল বদল স্বপনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + 19 =