শিয়রে শমন বিজেপি সাংসদদের। লোকসভা নির্বাচনের আগেই আরও এক ধরনের ভোটের লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে বিজেপি সাংসদদের। এ হল জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ভোট। এদিকে এই ভোটে ভরাডুবি হলে লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পাওয়া একরকম অনিশ্চিত। ফলে, স্যাফ্রন ব্রিগেডের সাংসদদের উৎকণ্ঠা চরমে। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, ২০১৪-য় নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পরেই তৈরি হয় ‘নমো অ্যাপ’। যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের যাবতীয় তথ্য নিয়মিত আপডেট করা হয়। যাতে বিজেপি নেতাকর্মীরা ওই অ্যাপে ক্লিক করেই সহজে বুঝে নিতে পারেন কোন পথে দেশকে নিয়ে যেতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে বিজেপি শিবির সূত্রে খবর, দলের সব নেতা-কর্মীর স্মার্টফোনে ওই অ্যাপ ডাউনলোড করা আছে। শুধু তাই নয়, বহু সাধারণ মানুষও ওই অ্যাপ ব্যবহার করেন।বিজেপি শিবির থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে গোটা দেশে নমো অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। এবার এই নমো অ্যাপেই শুরু হয়েছে ভোটাভুটির মাধ্যমে সাংসদদের মূল্যায়ন। যার পোশাকি নাম ‘জনমন সমীক্ষা’।
ফোনে নমো অ্যাপ ডাউনলোড করা আছে, এমন যে কেউ নিজের এলাকার সাংসদকে তাঁর কাজের নিরিখে পাশ অথবা ফেল করাতে পারবেন। সাংসদদের পারফরম্যান্স কেমন, সেই বিষয়ে নিজের সবিস্তার মতামতও জানাতে পারবেন বিজেপি কর্মীরা। তবে কেবল বিজেপি সাংসদ নয়, অন্যান্য দলের সাংসদ সম্পর্কেও এই অ্যাপে মতামত জানানো যাবে। বিজেপি সূত্রের খবর, দলীয় সাংসদদের নিজের নিজের এলাকায় জনপ্রিয়তা কী রকম, সেটা আসলে এই ভোটাভুটির মাধ্যমে যাচাই করে নিতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর, নমো অ্যাপে এই ভোটাভুটি বেশ চিন্তায় ফেলেছে বিজেপি সাংসদদের অনেককে। নমো অ্যাপের ভোটাভুটিতে পাশ করতে না-পারলে কোনও সাংসদের ফের টিকিট পাওয়া কার্যত অনিশ্চিত। রাজ্য বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্য, ‘এই রাজ্যেরই বেশ কয়েক জন বিজেপি সাংসদ আছেন, যাঁরা নিজেদের এলাকায় সময় দেন না। দলের স্থানীয় সাংগঠনিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও ওই সাংসদের সম্পর্ক মধুর নয়।নমো অ্যাপের ভোটে তাঁদের অনেকেরই হয়তো জামানত জব্দ হতে চলেছে। ফলে, এবারের লোকসভা ভোটে তাঁদের টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্যই চিন্তা-ভাবনা করবেন।’
বিজেপি সাংসদদের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে নমো অ্যাপের অন্য একটি আপডেট। সেখানে ভোটাভুটি অপশনের নিচে একটি মোক্ষম প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট লোকসভা কেন্দ্রের তিনজন জনপ্রিয় বিজেপি নেতার নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে অ্যাপের নির্দিষ্ট জায়গায়। এটাই সব চেয়ে উৎকণ্ঠার ব্যাপার বলে মনে করছেন বাংলার বিজেপি সাংসদদের একাংশ। কারণ, দক্ষিণবঙ্গের এক পদ্ম সাংসদ এই প্রসঙ্গেই জানান, ‘দেখেশুনে মনে হচ্ছে, বিজেপির দখলে থাকা লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে বিকল্প প্রার্থীর খোঁজ চালাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দেশের বহু আসনেই যে সিটিং এমপি সরিয়ে নতুন মুখ নিয়ে আসা হবে, সেই ইঙ্গিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরা তো আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। এখন নমো অ্যাপের ভোটাভুটি প্রক্রিয়া এবং এলাকার তিনজন জনপ্রিয় বিজেপি নেতার নাম জানতে চাওয়া থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তা তাই স্পষ্ট।’
বিজেপি সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনাগুলি থেকেই স্পষ্ট, বেশ কয়েক জন বিজেপি সাংসদের সঙ্গে স্থানীয় দলীয় কর্মীদের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়।সম্প্রতি বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারকে ঘেরাও করেছিলেন তাঁর দলের কর্মীরাই। এদিকে সূত্রে এ খবরও মিলছে, হুগলির বিজেপি কর্মীদের একাংশের সঙ্গে এলাকার সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের তিক্ততা বেড়েই চলেছে। একই ঘটনার সাক্ষী কোচবিহার। সেখানে সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে এলাকার বিজেপি কর্মীদের অসন্তোষ বাড়ছে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রেরই খবর।