জল জীবন মিশন প্রকল্পে অর্থ পরিশোধ না করায় সঙ্কটে অল বেঙ্গল পিএইচই কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন

জল জীবন মিশন (জেজেএম)-এ কাজ করেও অর্থ পাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগে কর্মরত ঠিকাদারেরা। অথচ গত তিন থেকে চার দশক ধরে এই কাজই করে আসছেন তাঁরা। আর এই ইস্যুতেই এবার উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেল  পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগে কর্মরত ঠিকাদারদের প্রতিনিধিত্বকারী কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (সিভিল)-এর সদস্যদের।

জল জীবন মিশন বা হর ঘর জল প্রকল্প, যা ভারত সরকার দ্বারা ২০১৯ সালে ২,০৮,৬৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে চালু করা হয়েছিলয় এই প্রকল্প লক্ষ্য ছিল ২০২৪ সালের মধ্যে সমস্ত বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া। পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ব্যয়ের সমান অংশীদারিত্ব সহ ৫৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনও করা হয়েছিল। এই প্রকল্পে এখনও রাজ্যের ১.৭৩ কোটি পরিবারের মধ্যে প্রায় ১ কোটি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এদিকে এই কাজে নিযুক্ত ঠিকাদাররা এখনও প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা প্রদানের অপেক্ষায় রয়েছেন, আরও ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিল জমা দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগে কর্মরত ঠিকাদারদের প্রতিনিধিত্বকারী কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (সিভিল)-এর সদস্যরা জানাচ্ছেন, প্রকল্পের সময়সীমা বারবার বাড়ানো সত্ত্বেও, পশ্চিমবঙ্গে তহবিল বিতরণ গুরুতর ব্যাঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। নির্ধারিত ২৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১৩,৩১৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফ থেকে ৫৪ কোটি টাকা ছাড় দেওয়াও হয়েছে। এদিকে রাজ্য সরকার, তার ২০২৫-২৬-এর বাজেটে, ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ১১,৬৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করলেও ঠিকাদাররা তীব্র আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন।

এই প্রসঙ্গে মানস চট্টোপাধ্যায়, জয়েন্ট সেক্রেটারি, A.B.P.H.E.C.A। (সিভিআইএল) বলেন, ‘আমাদের সংগঠন সৎ বিশ্বাসে এবং সরকারের মিশনের প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই বিশাল আকারের কাজ হাতে নিয়েছে, এমনকি গ্রামীণ বাংলায় নিরাপদ পানীয় জলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ ও সম্পদ অঙ্গীকার করেছে। তবে, কয়েক মাস ধরে অর্থ প্রদান বন্ধ থাকায় ঠিকাদাররা শ্রমিক, ঋণদাতা এবং ব্যাঙ্কগুলির প্রতি আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে অক্ষম। এর ফলে এই ক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ পরিবারের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।’

এর পাশাপাশি তাপস ঘোষ, চিফ হুইপ, হাওড়া P.H.E. কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন জানান, ‘অ্যাসোসিয়েশন বারবার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছে এবং বিভিন্ন স্তরে হস্তক্ষেপ চেয়েছে, তবুও সংকট সমাধানের জন্য কোনও কার্যকর ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়নি। দুর্গাপূজা-বাংলার বৃহত্তম উৎসব-এগিয়ে আসার সাথে সাথে অনেক ঠিকাদার, শ্রমিক এবং তাদের পরিবার তীব্র আর্থিক চাপ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে উৎসবের মরসুম কাটাতে ভয় পায়।’

একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা ঠিকাদার (বিল্ডারস) অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ের কাছেই আবেদন জানাচ্ছি যাতে তারা অবিলম্বে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করে সময়মতো তহবিল বিতরণ নিশ্চিত করে। এ ব্যাপারে ঠিকাদাররা জল জীবন মিশনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবিকা রক্ষা এবং যে কোনও সম্ভাব্য অস্থিরতা রোধে অবিলম্বে প্রশাসনিক পদক্ষেপের অনুরোধও করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 5 =