সোমবার ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা, অঙ্ক পরীক্ষা আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি। ইংরেজি পরীক্ষার আগেই মালদায় চাউর হয়ে যায় প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে। জেলাস্তরে তদন্তে নামে সংসদ। তারপরেই সামনে আসে প্রতারণার কারবার।
এই প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পরীক্ষার ইংরেজি ও অঙ্ক পরীক্ষার ভুয়ো প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে জালিয়াতির কারবার চালানো হয়েছে। এটি শুধু অভিযোগের আকারেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এই ইস্যুতে বিধাননগর কমিশনারেটের দ্বারস্থ হয় সংসদ। রবিবার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে বিধাননগর কমিশনারেটে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সংসদের অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে একদল প্রতারক ইংরেজি ও অঙ্কের আসল প্রশ্নপত্র বলে দাবি করে। শুধু তাই নয়, এই প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে হাজার হাজার টাকাও তুলছে এই প্রতারকেরা। এরপরই এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে সংসদ। সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানান, মূলত মালদা ও উত্তর দিনাজপুর থেকেই অভিযোগগুলি সামনে এসেছে। এর পিছনে কোনও একটি চক্র কাজ করছে বলে প্রাথমিক অনুমানও করছেন তিনি।
এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ সূত্রে এও জানানো হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামঅ্যাপে বেশ কয়েকটি গ্রুপ বানানো হয়েছে। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকের সিল জাল করে কিছু প্রশ্নের স্যাম্পল ছাড়া হয়েছে। সঙ্গে ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে অনলাইন পেমেন্টের কিউআর কোড। সেখানে প্রতারকদের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, আবেদনকারীরা চাইলে বাকি প্রশ্নও মোটা টাকার বিনিময়ে তাদের শেয়ার করা হবে। যেমন অঙ্কের প্রতি প্রশ্ন পিছু ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত তোলা হয়েছে বলে পর্ষদের নজরে এসেছে। অর্থাৎ অঙ্কের একটি প্রশ্নপত্রে যদি সব মিলিয়ে ২০টি প্রশ্ন থাকে তাহলে প্রতারকরা গোটা পেপারটির দাম ধার্য করেছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। ইংরেজির প্রশ্নপত্রের ক্ষেত্রে এই দর উঠেছে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। সংসদের আশঙ্কা, দু’টি জেলা মিলিয়ে পড়ুয়াদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই তোলা হয়ে থাকতে পারে। যে কিউআর কোডের মাধ্যমে টাকা তোলা হচ্ছে, তার স্ক্রিনশটও সংসদের হাতে পৌঁছেছে বলেও খবর। এই স্ক্রিন শটগুলিও পুলিশের কাছে জমা করা হয়েছে। যাতে কে টাকা রিসিভ করেছে তা সহজেই জানা যায়। কোন কোন পড়ুয়া বা তাদের আত্মীয়রা এই প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে পর্ষদ সভাপতি জানান, ‘আমাদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের যাবতীয় ডিটেল রয়েছে। স্ক্রিনশট রয়েছে। কারা টাকা তুলেছে, কত টাকা তোলা হয়েছে সে সব তথ্যই আমরা পুলিশের কাছে দিয়েছি।’ চিরঞ্জীবের সংযোজন, ‘যে সব প্রশ্নের স্যাম্পল হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রাম গ্রুপে দেওয়া হচ্ছে, সেটা মোটেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্ন নয়। কোনও প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। যারা টাকা দিয়েছে, তারা ঠকেছে।’
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করে দুটি অ্যাডভাইজারি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় বোর্ড সিবিএসই। দেশ জুড়ে ওই বোর্ডেরও দশম ও দ্বাদশের পরীক্ষা চলছে। তার আগে একদল প্রতারক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ফেক প্রশ্নকে বোর্ডের প্রশ্ন বলে চালিয়ে টাকা তুলছে বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে সিবিএসই।