খাস কলকাতায় দৃষ্টিহীন ছাত্রীদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

খাস কলকাতায় সামনে এল দৃষ্টিহীন ছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। যে পড়ুয়াদের আলাদাভাবে দেখাশোনা করা প্রয়োজন, তাঁদেরকেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে স্কুলে। দৃষ্টিহীন শিশুদের স্কুলের ভিতরে চলত অবাধ যৌন নির্যাতন। ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের বিভীষিকা। প্রতিবাদ করতে গেলে জুটত মার, ঠাঁই হত অন্ধকার ঘরে, বন্ধ হয়ে যেত খাবার। এমনই অভিযোগ উঠছে হরিদেবপুরের ব্লাইন্ড স্কুলের বিরুদ্ধে।

শিশু সুরক্ষা কমিশনের করা এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর তারপর সামনে এসেছে আরও একগুচ্ছ অভিযোগ। দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের বিশেষ যত্ন নেওয়া তো দূরের কথা, দিনের পর দিন তাঁরা অবহেলার শিকার হত বলেও অভিযোগ উঠেছে কলকাতার হরিদেবপুরের ওই স্কুলের বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রে খবর, হোমের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। গ্রেফতার করা হয়েছে, স্কুলের অধ্যক্ষা, মালিক ও রান্নার লোককে। পাশাপাশি পুলিশের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, ওই স্কুলের তিন ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাদের মধ্যে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণও করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা জানার পরই রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফ থেকে লালবাজারে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। পকসো আইনে মামলা রুজু হয়েছে। এরপরই হোমে যায় কলকাতা পুলিশের একটি তদন্তকারী দল। তদন্তে হোমের মালিক জীবেশ দত্ত ও রান্নার লোক বাবলু কুণ্ডুকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর হোমের ৪০ জন আবাসিককে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র।

শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফে উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানান, সম্প্রতি কমিশনের তরফে এক মহিলা কোনও পরিষেবা সংক্রান্ত কাজে ওই হোমে গিয়েছিলেন। এরপরই নাকি ওই স্কুলের আবাসিক পড়ুয়ারা মহিলাকে সামনে পেয়ে বলতে থাকে, ‘আমাদের বাঁচান।’ অভিযোগ শুনে আর দেরী করেননি ওই মহিলা। এরপর শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে যায় খবর। বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর বলে অনুমান করেই কমিশন খবর দেয় লালবাজারে।

এরই পাশাপাশি অনন্যা চক্রবর্তী এও জানান, এটি একটি বেসরকারি স্কুল। সরকারি কোনও আর্থিক সাহায্যও পায় না। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে ভিতরে কী হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলের পড়ুয়ারা প্রথমটায় মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছিল। পরে বিস্ফোরক সব অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। নিয়মিত যৌন নির্যাতনের কথা তারা পুলিশ ও কমিশনকে জানায়। এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, ১০ বছর বয়স থেকে তার ওপর চলছে নির্যাতন। মূলত বয়ঃসন্ধির পর থেকেই ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন করা হত বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করলে অন্ধকার ঘরে রেখে দেওয়া হত তাদের! কখনও কখনও একদিন অন্তর খেতে দেওয়া হত বলেও অভিযোগ উঠেছে।

শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। তড়িঘড়ি তাঁর গর্ভপাতও করানো হয়! কোথা থেকে এই গর্ভপাত করানো হয়েছে, তা পুলিশকে খুঁজে বের করতে বলেছে শিশু সুরক্ষা কমিশন। কারণ যার সঙ্গে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ, সেও এক নাবালিকা। তার গর্ভপাত কীভাবে করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনায় কমিশন জানিয়েছে, পড়ুয়াদের বয়ান অনুযায়ী একবার দুই জন শিক্ষিকার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তাঁরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই স্কুলের অধ্যক্ষা সব জানতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কমিশন জানিয়েছে, পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই চোখে দেখতে পায় না। অনেকেরই বাবা, মা নেই। অসহায় অবস্থা।

এদিকে আবাসিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এই স্কুলে তথা হোমে শিশুদের অবহেলার চোখে দেখা হত। কিছুদিন আগে এই হোমের আবাসিক এক শিশুর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও একজন তিন তলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। হোমের কর্মীদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, জানা যায়, মেয়েদের বিভাগে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, এসেছেন নতুন লোক। অন্যদিকে একাংশের অভিযোগ, এই হোমের বিল্ডিং-এ বিয়েবাড়ি পর্যন্ত ভাড়া দেওয়া হত। ফলে বাইরের লোকের অবাধ যাতায়াত ছিল সেখানে। আদৌ কারও কোনও নজরদারি ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − six =