পারা পতনের সঙ্গে সঙ্গে দূষণ বাড়ছে বাতাসে। শুধু রাজধানী দিল্লিতেই এই ছবিটা ধরা পড়ছে তা নয়। এর থেকে বাদ পড়ছে না শহর কলকাতাও। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, দিন তিনেক আগেও মহানগরে বাতাসের দূষণ মাত্রা ছিল ১০০–এর নিচে। কিন্তু শুক্রবার থেকে তা ঊর্ধ্বমুখী। শনিবার কোথাও কোথাও তা আড়াইশোও ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার থেকে হাল খারাপ মফস্সলের।
এই মুহূর্তে বাংলার মধ্যে বাতাস সব থেকে খারাপ উত্তরবঙ্গে। পাহাড়ে বাতাস তাও নির্মল, কিন্তু দুই দিনাজপুর, মালদহের বাতাসের বিষ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পরিবেশ কর্মীরা জানাচ্ছেন, বঙ্গে ফসল পোড়ানোর পাশাপাশি দায়ী জমিয়ে রাখা জঞ্জাল পোড়ানো। তাতে বাতাস বিষোচ্ছে, প্লাস্টিক পুড়ে ক্ষতি হচ্ছে মানুষের শ্বাসযন্ত্রেরও।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার থেকে বাংলায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার থেকে বাতাসের মানের সূচক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই)–ও বাড়তে শুরু করে। শনিবার সন্ধ্যায় বালিগঞ্জে একিউআই ছিল ২৫৩। কিন্তু এখানে বাতাসের ভাসমান কণা পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫–এ/ সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৩২৩। বিধাননগরে একিউআই ছিল ২০৩। কিন্তু পিএম–২.৫ এর সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৩০১। কলকাতা লাগোয়া হাওড়ার ঘুসুড়িতে শনিবার সন্ধ্যায় একিউআই ছিল ২৯৩। আর পিএম–২.৫ এবং পিএম–১০–এর সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৪২ এবং ৪১৯।
এদিন রাজ্যের মধ্যে একিউআই সব থেকে বেশি ছিল উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায়। শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে একিউআই ছিল ৩২০। সেখানে পিএম–১০ এর সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৩৫০। শুধু ডালখোলাই নয়, উত্তরবঙ্গের সর্বত্রই বাতাসের মান খুব খারাপ। উত্তর দিনাজপুরেরই গোয়ালপোখরে বাতাসের মানের সূচক ছিল ২৯৫। এই জেলারই কালিয়াগঞ্জে একিউআই ছিল ৩০০। সুন্দরবন এলাকার বাতাসও প্রায় শ্বাসের অযোগ্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিজয়নগর এলাকায় শুক্রবার রাতে একিউআই ছিল ৩০৯। শুক্রবার রাতে ঝাড়গ্রামের টিয়াকাঠি এলাকায় বাতাসে বিষের মাত্রার সূচক ছিল ২৯৬। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলাতেই বাতাসের বিষের মাত্রা ২০০’র বেশি।
তবে এটা ঠিক যে, শীতে কলকাতায় বাতাসের মান খুব খারাপ হয়। এই প্রসঙ্গে পরিবেশ জানাচ্ছেন, শীতের শুরুতে এটা ঘটা স্বাভাবিক। কারণ, এই সময় ধান ওঠার পরে সেই জমি আলু চাষের জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু ধান গাছের গোড়া উপড়ে ফেলতে খরচ বেশি হয় বলে চাষিরা তা পুড়িয়ে দেন। তার ফলে বাতাস দূষিত হয়। বেশিরভাগ পুরসভা জঞ্জাল জমিয়ে রাখে। জঞ্জাল অপরাসণের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে জমিয়ে রাখা জঞ্জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই জঞ্জালে মিশে থাকে প্লাস্টিকও। তার ফলে বাতাসে বিষের মাত্রা বাড়ে। শীতে বাতাস ভারী হয়ে যায় বলে বাতাসে দূষণের মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, জঞ্জাল বা ফসলের গোড়া কিছুই পোড়ানো যাবে না। কিন্তু তা যেমন মানা হচ্ছে না, তেমনই তা দেখা বা দেখা শাস্তি দেওয়ার বিষয়ও নেই। সেই জন্যই বাড়ছে বাতাসের বিষের মাত্রা।’