অবিচার, অন্যায়, অপমান ,অবজ্ঞা সহ্য করতে না পেরে সোমবারই তৃণমূলের সঙ্গে দু’দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তাপস রায়। দীর্ঘদিনের রাজনীতিক তিনি। আটের দশকে ছাত্র রাজনীতি থেকে উত্থান তাপস রায়ের। কংগ্রেসি রাজনীতিতে তাপস রায় উত্তর কলকাতার নেতা প্রয়াত সোমেন মিত্রের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত ছিল তাঁর। কলকাতা পুরনিগমের কাউন্সিলর থেকে বিধায়ক, জনপ্রতিনিধি থেকেছেন তাপস রায়। আর তাঁর এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন কংগ্রেস আমল থেকেই। এরপর দুর্নীতি-দুর্নীতি-দুর্নীতি শুনতে শুনতে অসুস্থ, ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি। ছোট আঙাড়িয়া, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর দেখে প্রতিবাদ করেছেন এক সময়। অথচ এখন চোখের সামনে বগটুই, সন্দেশখালি দেখতে হয়েছে তাঁকে। আর এখানেই প্রশ্ন এগুলো কি সমর্থন করা সম্ভব হতো তাপস রায়ের পক্ষে। কারণ, তাপস নিজে জানিয়েছিলেন তাঁর মতো মানুষেরা সম্মানের জন্য রাজনীতি করেন। এদিকে ৭ মাসের কয়েকদিন কম সময়ে তাঁকে কর্পোরেশনের ভোট করাতেও যেমন দেখা গিয়েছে ঠিক তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাবলিক মিটিংও তিনি-ই করিয়েছেন। করিয়েছেন অভিষেকের ঐতিহাসিক রোড শোও। সেই তাপস রায়ের গলাতেই শোনা গেছে সংগঠন নিয়ে অভিমান। প্রশ্ন উঠেছে, কেন তাঁকে উত্তরের সভাপতি করা হল তা তিনি জানেন না।আবার কেনই বা উত্তর থেকে সরিয়ে দেওয়া হল একজনের বায়নায়।
এখানে মনে করিয়ে দিতেই হয়, ২০০১ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তাপস রায়। ২০১১ সাল থেকে বরানগরের বিধায়ক তিনি। পরপর তিন বছর এই কেন্দ্র থেকে লড়েছেন এবং জিতেছেন। ২০১৬ সালে বরানগরে দ্বিতীয়বার জেতার পর বিধানসভায় পরিষদীয় দলের উপ মুখ্যসচেতক হন তাপস রায়। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে তাপস রায়কে পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী করেছিল তৃণমূল। তবে ২০২১ সালে বরানগর থেকে ‘হ্যাট্রিক’ করলেও মমতার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি তাপস রায়ের। আর এখানেই ক্ষোভ রয়েছে তাপসের অনুগামীদের। তাঁদের বক্তব্য, পরপর তিনবার যিনি একই আসন জিতে দেখালেন, তাঁকে দল সেই মর্যাদাই দেয়নি। এক সময় উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন তাপস রায়। তবে তার মেয়াদ ছিল ৮ মাসের মতো। এরপরই তাপসকে সরিয়ে সে স্থানে বসানো হয় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই প্রসঙ্গে স্বয়ং তাপস রায়কেও বিভিন্ন সময় নানা সভামঞ্চে নিজের অসন্তোষের কথা তুলে ধরতে দেখা যায়। এদিকে দল তাঁকে পরে দমদম-ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি করেছিল। তবে তাঁর অনুগামীদের মতে, তাপস রায়ের আরও অনেক বেশি কিছু পাওয়ার কথা ছিল। এক সভায় তাপস রায় নিজেই বলেছিলেন, ‘আমার মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি। ১২ বছরে আড়াই বছর মন্ত্রী ছিলাম। তার আগেও ছিলাম না, পরেও ছিলাম না। আমার থেকে বহু যোগ্যতায় ধারে কাছে নেই তাঁরা মন্ত্রী। কী হয়েছে তাতে?’