জুলাইয়ের আগে বর্ষা প্রবেশ করেছে বঙ্গে। চলতি মরশুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও শুনিয়েছে মৌসমভবন। আর সেই কারণেই বর্ষার আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দুর্গাপুর ব্যারেজ সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হলেও বদল করা হয়নি সেতুর বেয়ারিং। আর এখানেই উঠেছে নানা প্রশ্ন। শুধু তাই নয়,যেভাবে ওভারলেডিং বালি, পাথর বোঝাই লরি, ডাম্পার যাতায়াত করে তাতে বেয়ারিংয়ের স্বাস্থ্য নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অন্যদিকে একের পর বিপর্যয়ের পর ব্যারেজের এখনও ১৬ টি লকগেট বদলের কাজও থমকে। ফলে ভারি বর্ষায় আবারও লকগেট বিপর্যয় আশঙ্কায় দুর্গাপুরবাসী।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, গত ১ মে থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দুর্গাপুর ব্যারেজের ওপর রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। জঙ্গলমহল বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরের সঙ্গে দুর্গাপুর ও উত্তরবঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী এই দুর্গাপুর ব্যারেজ সেতু। দৈর্ঘ্যে ৯৬২ মিটার এই সেতু গত কয়েকবছর বেহাল হয়ে পড়েছিল। স্ট্রিপ সিল্ট জয়েন্টের অবস্থাও ছিল বেহাল। আর সেই কারণেই ব্যারেজের ওপর এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে। ভারী যান চলাচলের ফলে সেতুর ওপর রাস্তা অত্যন্ত বিপদজ্জনক হয়ে ওঠে। ঘটনা নজের আসতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। শুধু তাই নয়, এটি খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ার টাস্ক ফোর্স গঠনেরও নির্দেশ দেন। এদিকে সূত্রে খবর, দৈনিক প্রায় ২৬ হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। যার মধ্যে রয়েছে ৮ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। এই ভারী যানবাহনের কারণে ব্যারাজের উপর বিপুল পরিমাণে চাপ পড়ে। ফলে এটি সংস্কারের প্রয়োজনও ছিল। এছাড়াও বিহার, ওড়িশাগামী বাসও যাতায়াত করে এই পথেই। গত এপ্রিল মাসে বিকল্প সড়ক দামোদর গর্ভে তৈরী হয়। গত ১ মে থেকে ১৫ জুন ৪৫ দিনের মধ্যে ২৯ টি স্ট্রিপ সিল্ট জয়েন্ট নতুন করে বসানো হয়। সেতুর ওপর পিচ ও কংক্রিট একটা স্তর তুলে নতুন করে ম্যাস্টিক কাজ হয়। সেতুর ওপর স্ট্রিপ সিল্ট ও সড়ক সংস্কার হলেও, ব্যারেজের পিলারের থাকা সেতুর নিচের বেয়ারিং বদল না হওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল,ওইসব বেয়ারিংয়ের স্বাস্থ্য কতটা মজবুত রয়েছে তা নিয়েও।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৫ সালে এই ব্যারেজ তৈরি হয়। ব্যারেজকে আরও মজবুত করার জন্য পিলার ও সেতুর মাঝে বেয়ারিং দেওয়া হয়। সেই পুরোনো বেয়ারিংয়ের ওপর ভর করে রয়েছে সেতুটি। তার ওপর দিয়ে ছুটছে প্রায় ২৬ হাজার যানবাহন। এদিকে আবার অতীতে দু-দুবার ব্যারেজের লকগেট বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে ব্যারেজের ১ নং লকগেট ও ২০২০ সালে ৩১ নং লকগেট বিপর্যয় হয়। তাতে চরম সমস্যায় পড়তে হয় আসানসোল- দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলবাসীকে। অন্যদিকে দুর্গাপুর ব্যারেজের সেচের জলের ওপর নির্ভরশীল ৮ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি। দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে নগরায়নের জন্য ৫০০ কিউসেক জল দৈনিক ছাড়তে করতে হয়। আসানসোল- রানিগঞ্জ নগরায়নের জন্য দৈনিক প্রায় ১ হাজার কিউসেক জল লাগে। কৃষিকাজে সেচের জন্য বছরে জল প্রয়োজন সাড়ে ৪ লক্ষ একরফুট। আগামীদিনে যেভাবে নগোরায়ন বাড়ছে, তাতে আরও জলের প্রয়োজন পড়বে। এছাড়াও রয়েছে শিল্পায়ন। আসানসোল-দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, কাঁকসা, পানাগড় ও বড়াজোড়া শিল্পতালুক ব্যারেজের জলের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও রয়েছে ওইসব শিল্পাঞ্চলের মেজিয়া, অন্ডাল, ডিটিপিএস, ডিপিএলসহ ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যেগুলি ব্যারেজের জল না পেলে মুখ থুবড়ে পড়বে।