বাংলার শিল্পে আরও এক দুঃসংবাদ, বন্ধ হয়ে গেল ব্রিটানিয়ার একমাত্র কারখানা

বাংলার শিল্পে আরও এক দুঃসংবাদ। বন্ধ হয়ে গেল বাংলায় ‘ব্রিটানিয়া’র একমাত্র কারখানা। ধুঁকতে থাকা উৎপাদন সংস্থার তারাতলার কারখানায় সোমবার তালা পড়ে গেল আজীবনের মতো। কলকাতার বুকে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিল ব্রিটানিয়া কোম্পানি। কারখানায় স্থায়ী কর্মী ছিলেন ১২২ জন। অস্থায়ী কর্মী ছিলেন ২৫০ জন। এই কোম্পানিতে  আড়াই হাজার টন উৎপাদন হত  প্রতিবছর। কর্মীরা কাজে গিয়ে হঠাৎ করেই কারখানার গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস দেখতে পান।শতবর্ষেরও বেশি প্রাচীন কারখানা বন্ধ হওয়া শুধু এতজনের কর্মজীবনে আঘাতই নয়, আঘাত বাঙালির আবেগেরও। ব্রিটানিয়ার সঙ্গে আমবাঙালির সম্পর্ক বহুদিনের। বিখ্যাত বিজ্ঞাপন ‘দাদু খায়, নাতি খায়’-এর এতদিনের স্বাদ এবার বস্তুতই বিস্বাদ হয়ে গেল। সংস্থার তরফে কারখানার স্থায়ী কর্মীদের এককালীন টাকা দেওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণ বাবদ। কিন্তু অস্থায়ী কর্মীদের তেমন কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

তারাতলায় ব্রিটানিয়া সংস্থার বড় উৎপাদনকারী সংস্থা। প্রতি বছর গড়ে ২৫০০ টনেরও বেশি বিস্কুট-সহ অন্যান্য স্ন্যাকস উৎপাদন হতো। মাস দুয়েক ধরে কারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধের মুখে পড়েছিল। তখনই অশনি সংকেত পান কর্মীরা। কিন্তু তাড়াতাড়ি যে একেবারে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাবে, তা ভাবতে পারেননি কেউই। সোমবার সকালে তাই অন্যান্য দিনের মতোই নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় পৌঁছন কর্মীরা। কিন্তু গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস দেখে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁদের! বুঝতে পারেন, ব্রিটানিয়া সংস্থার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল। সেইসঙ্গে বাংলার শিল্পমহলেও ঘনাল দুশ্চিন্তার মেঘ।

কিন্তু কী কারণে কলকাতার একমাত্র ব্রিটানিয়া কারখানা বন্ধ হয়ে গেল তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে সংস্থা। ব্যবসায় মন্দা না শ্রমিক সমস্যা কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত তা নিয়ে কোনও আঁচই মিলছে না ব্রিটানিয়া সংস্থার তরফ থেকে। তবে ব্যবসায়িক দিক থেকে কোনও সমস্যা হয়নি বলেই মত শ্রমিকদের একাংশের। এখনও বঙ্গে ব্রিটানিয়ার খাদ্যসামগ্রী বিক্রিতে অন্য যে কোনও সংস্থার চেয়ে যথেষ্ট এগিয়ে। তবে কারখানা সূত্রে খবর, কোম্পানিতে যাঁরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করতেন, তাঁদের এক কালীন টাকা দিয়েছে কর্তপক্ষ। তাঁদেরকে এক কালীন ২২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ছ থেকে দশ বছরের নীচে যারা চাকরি করেছে, তাঁদেরকে ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা দিয়েছে কোম্পানি। কিন্তু ২০০৪ সাল থেকে এই কোম্পানি ক্যাজুয়াল স্টাফ নেওয়া শুরু করে। বর্তমানে এই কোম্পানিতে ২৫০ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। তার নীচে যাঁরা চাকরি করেছেন, তাঁদেরকে ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে কোম্পানি। কিন্তু এক কানাকড়িও পাননি অস্থায়ী কর্মীরা। আর তা নিয়ে তাঁরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। কারখানার সামনে অস্থায়ী কর্মীদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বলে খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + fifteen =