আতঙ্কের আর এক নাম যাদবপুর

পথ চলতি মানুষের কাছে আতঙ্কের আর এক নাম যাদবপুর। কারণ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর জেরে উত্তাল রাজনীতি। রোজই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলছে প্রতিবাদ মিছিল। তার জেরে গত বেশ কিছুদিন ধরে যাদবপুর দিয়ে যাতায়াতই করাই দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমজনতার। লাগাতার মিটিং-মিছিলে রাস্তায় গাড়ি চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে যাবপুরে ভরসা বলতে বাস, মিনিবাস। তারাও অবরোধ-বিক্ষোভ-জ্যাম কাটিয়ে কতক্ষণে যাদবপুর চত্বর পেরোয়, তার ঠিক থাকছে না।পরিস্থিতি এমনই যে যাদবপুরের নাম শুনলে ট্যাক্সি-চালকরা মুখ ফেরাচ্ছেন। যাদবপুর দিয়ে একাধিক রুটের অটো চলাচল করে। ঝামেলা এড়াতে অটো-চালকরা পুরো রুটে চলাচল করছেন না। ফলে বেশ অনেকটা পথ হেঁটে যাওয়া ছাড়া বিকল্প থাকছে না। এদিকে একই অবস্থা ট্যাক্সি চালকদের ক্ষেত্রেও। যাদবপুরে যেতে চাইলে একের পর এক রিফিউজাল। কাৎণ, কেউই জ্যামে ফাঁসতে রাজি নন। ফলে একটু বেলা গড়ালেই আতঙ্কে আর কেউ যাদবপুর-মুখো হচ্ছে না। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা গন্তব্য বেছে নিচ্ছেন অন্য রুটে। সব মিলিয়ে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে যাদবপুর, ঢাকুরিয়া, গোলপার্ক ও গড়িয়াহাট মার্কেটের ব্যবসায়ীদের উপর। ক্রেতারা পৌঁছতে না পারায় কেনাকাটা গিয়েছে কমে।

এই প্রসঙ্গে যাদবপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক চন্দন সরকার বলেন, ‘করোনার পর থেকে এমনিতেই ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুব খারাপ। তার মধ্যে যাদবপুরে ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোজ রাস্তা বন্ধ করে মিটিং-মিছিল। সারাক্ষণ পুলিশের বড় বড় ভ্যান দাঁড়িয়ে। সে সব দেখে লোকজন বাজারে আসতে ভয় পাচ্ছেন। বেশ ক’দিন হলো দোকানে খদ্দের প্রায় পাচ্ছিই না।’ এদিকে গোলপার্ক-গড়িয়া ড্রাইভার অ্যান্ড অপারেটর্স ইউনিয়নের সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ জানান, ‘বিকেলে যখন প্যাসেঞ্জার বেশি হয়, তখনই যত মিটিং-মিছিল। ফলে যাত্রীদের যেমন হয়রানি হচ্ছে, তেমনই অটো চালকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’ তাঁর দাবি, ঘুরপথে অটো চালানোর অনেক সমস্যা। রাস্তা বেড়ে গেলে তেল-গ্যাস বেশি খরচ হবে। আবার পাড়ার ভিতর দিয়ে গেলে সেখানকার বাসিন্দারা আপত্তি জানান।’

এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতারা একযোগে জানাচ্ছেন তাঁরা চান না যে সাধারণ মানুষ কষ্টে পড়ুন।কিন্তু বঙ্গে কোনও কিছুর বিরোধিতা করতে গেলে পথে নেমে আন্দোলন করা ছাড়া উপাযও নেই।   এই প্রসহ্গে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা মানুষকে কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু এত বড় সামাজিক অপরাধ দেখে চুপ করে বসেও থাকতে পারি না। একজন সচেতন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটা আমাদের নৈতিক কর্তব্য।’

এদিকে শাসক বিরোধী শিবিরের এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘যাঁরা অসুবিধায় পড়ছেন, তাঁদের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে প্রথাগত মিটিং-মিছিলের বাইরে মানুষের কাছে কোনও বার্তা পৌঁছে দেওয়ার বিকল্প রাস্তা আছে বলে আমাদের অন্তত জানা নেই। থাকলে নিশ্চয়ই সেটা অনুসরণ করতাম।’ তবে বিজেপি যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা এই সমস্যায় আঙুল তুললেন কলকাতা পুলিশের দিকেই। তিনি জানান, ‘মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সেটা পুলিশের দেখা উচিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + nine =