দলের কড়া বার্তার পরও অনুব্রত আছে অনুব্রতেই

দলের তরফ থেকে বেশ চাপে অনুব্রত মণ্ডল। এটা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত কাছের জন ‘কেষ্ট’।  সূত্র মারফৎ এও জানা যাচ্ছে, আইসির সঙ্গে অত্যন্ত কদর্য ভাষায় কথা বলার ঘটনায় অনুব্রতকে নাকি চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সুব্রত বক্সি। কুকথা কাণ্ড নিয়ে দেওয়া হয়েছে স্পষ্টতই তাঁকে দেওয়া হয়েছে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’। তৃণমূলের হাইকমান্ডের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর এমন হলে বরদাস্ত করবে না দল। সঙ্গে এ প্রশ্নও নাকি অনুব্রতকে করা হয় যে, ‘প্রকাশ্যে এত মন্তব্য কেন?’এর থেকে এটা স্পষ্ট যে ২০২৬-এর আগে কোনওভাবেই নিজেদের ভাবমূর্তিতে কালি লাগাতে দিতে রাজি নয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটযুদ্ধে বিপক্ষকে ‘সূচাগ্র মেদিনী’ ছাড়তে নারাজ তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে বিরোধীরা রাজনৈতিক মাটি খুঁজে পাচ্ছে না পা রাখার এটাও যএমন ঠিক তেমনই  শাসকদল এটাও চাইছে না যে এমন কিছু ঘটনা ঘটুক যেখানে বিরোধীরা মাথা তুলে দাঁড়ানোর কোনও সুযোগ পায়।
এদিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের এবারের একুশ জুলাই যে আলাদা মাত্রা পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে কারণেই প্রস্তুতি বৈঠকে দলের সমস্ত জেলার সভাপতি, জেলা চেয়ারম্যান ও বীরভূম এবং উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্যদের ডাকা হয়। এদিকে বীরভূম ও উত্তর কলকাতার সংগঠনিক খোলনলচে বদলেছে কয়েকদিন আগেই। আর নেই কোনও জেলা সভাপতি। কাজ করছে কোর কমিটি। সে কারণেই এসেছিলেন অনুব্রত কাজলরা। তবে আইসি-কে অত্য়ন্ত কু-কথা বলার যে অডিও ভাইরাল হয়েছিল তারপর  শনিবার প্রথম প্রকাশ্যে এই দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যায় অনুব্রত মণ্ডলকে। আর সেখানেই নেতৃত্বের কাছে খেলেন তুমুল বকাও।  সূত্রের খবর, শনিবার সকালে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি বৈঠকে যোগ দিতে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কলকাতার উদ্দেশ্যে বীরভূম থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, কাজল শেখরা। এরপর দুপুর ১টা নাগাদ ভবানীপুরে গীতবিতান ভবনে অনুব্রত পৌঁছাতেই তাঁর সঙ্গে কাজলকে নিয়ে বেরিয়ে যান ফিরহাদ হাকিম। সোজা চলে যান রাজ্য তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত বক্সির দপ্তরে। সেখানে কাজল শেখ আর অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে আলাদা করে বৈঠক করেন নেতৃত্ব। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে সেই পৃথক বৈঠক।
ছিলেন সুব্রত বক্সি নিজেও। ছিলেন অরূপ বিশ্বাসও।  সূত্রে খবর, এদিনের এই বৈঠকে কড়া বার্তা দেওয়া হয় বীরভূমের দুই নেতাকেই। কারণ, বহু ঝড় মাথায় নিয়ে এই দলটিকে তৈরি করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই লড়াইয়ে মিশে রয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর অনেক রক্ত, অনেক ঘাম। আর সেই পার্টির ক্ষতি হবে কারও ব্যক্তিগত ইগোর লড়াইয়ের জন্য তা যে বরদাস্ত করা হবে না এদিন তা স্পষ্ট দলের তরফ থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় কাজল-অনুব্রতকে। শুধু তাই নয়, এদিন অনুব্রতকে নাকি এও বলা হয়, ‘দল অনেক ভেবে চিন্তে চলে। ভাবনা চিন্তা করেই কোর কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। কোর কমিটির সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। সামনে ভোট। ফলে এমন আচরণ করা যাবে না যাতে দলের ক্ষতি হয়। ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকলে আমাদের বলুন। কিন্তু প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে মুখ খোলা যাবে না।’ সূত্রের খবর, এদিন অনুব্রত ফের জানিয়েছেন তিনি লজ্জিত।
এতো কিছুর পরেও ছবিটা বদলালো না। দলের নির্দেশের পরেও অনুব্রত আছেন অনুব্রততেই। তৃণমূল সূত্রে খবর, কলকাতায় সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিমদের সঙ্গে বৈঠকের পরই বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে এড়িয়েই দলের জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন অনুব্রত। নিজের তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেই অনুব্রত এই নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই কোর কমিটির চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 12 =