একুশে জুলাইয়ের আগে বীরভূম থেকে কলকাতায় ছুটে এসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমোর অত্যন্ত অনুগত অনুব্রত মণ্ডল। প্রস্তুতিতে যাতে কোনও খামতি না থাকে তা খতিয়ে দেখতে গ্রাউন্ড জিরোতেও রবিবার সন্ধেয় দেখা যায় অনুব্রতকে। তবে কিছুটা একাকী, তাঁকে ঘিরে এদিন না ছিল তেমন কোনও ভিড় বা কোনও বিশেষ উচ্ছ্বাস। ‘চড়াম চড়াম’, ‘গুড় বাতাসা’-র হুঙ্কার দেওয়া সেই ‘টোন’ আজকাল সামান্য বদলেছে। তবে বদলায়নি তার স্লিপ- অফ-টাংয়ের ঘটনা। আর যে কারণে সম্প্রতি বোলপুরের আইসি–কে ফোনে তাঁর করা নানা কটূক্তি নিয়ে তোলপাড় পড়ে রাজ্য রাজনীতিতে। দল শো–কজও করেছিল তাঁকে। শাসকদলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, দলে খানিক কোণঠাসাও তিনি। তার স্পষ্ট প্রমাণ, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির পদে তাঁকে ফেরত না আনা।
অথচ, গরু পাচার মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করার পর এই অনুব্রতর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই অনুব্রত মণ্ডলকেই কী না রবিবার ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ দিবসের সভাস্থলে মূল মঞ্চে যাওয়ার পথে আটকে দিল পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সেখান থেকে চলে গেলেন তৃণমূলের বীরভূমের প্রাক্তন জেলা সভাপতি। অনুব্রতর চলে যাওয়ার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর সভাস্থলে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে এদিন ‘দিদি’-র সঙ্গে দেখা হয়নি কেষ্টর।
এদিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ধর্মতলায় তৃণমূল শহিদ দিবসের মঞ্চের কাছে দেখা যায় অনুব্রতকে। পরনে নীল রঙের পাঞ্জাবি। মূল মঞ্চের কাছে গার্ডরেল দিয়ে ঘেরা ছিল। সেখানে তৃণমূলের বীরভূমের প্রাক্তন জেলা সভাপতি পৌঁছন। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সেখানে আটকান। বাধা পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন কেষ্ট। ওখানে দেখা যায় বজবজের তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেবকে। শাসকদলের দুই নেতা হাত মেলান। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা। সেইসময় দেখা যায়, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল সমর্থকরা অনুব্রতকে দেখে হাত নাড়ছেন। পাল্টা তাঁদের দিকে হাত নাড়েন অনুব্রত। এর কিছুক্ষণ পর গার্ডরেলের পাশে চেয়ার পেতে বসতে দেখা যায় অনুব্রত ও অশোক দেবকে। কিছুক্ষণ পর অবশ্য উঠে চলে যান অনুব্রত। তৃণমূল সুপ্রিমোর মঞ্চে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি।
তবে এদিন মমতার সঙ্গে অনুব্রতর দেখা না হওয়া নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের অগস্টে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরও বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদে অন্য কাউকে বসাননি মমতা। কেষ্টকে বীরভূমের বাঘ বলেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। গতবছরের সেপ্টেম্বরে অনুব্রত জামিন পেয়ে জেলায় ফেরেন। কিন্তু, এখন আর বীরভূমে জেলা সভাপতি পদে নেই তিনি। এখন তিনি বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির একজন সদস্য মাত্র। বীরভূমে জেলা সভাপতি পদে আর কাউকেই এখনও বসাননি মমতা। ফলে শহিদ দিবসের সমাবেশে কেষ্টকে কোথায় দেখা যাবে, তা নিয়ে গুঞ্জন ক্রমশ বাড়ছে।