গরুপাচার মামলায় অনুব্রত, সুকন্যা, সায়গলের জেল হেফাজতের মেয়াদ বাড়ল। ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ল হেফাজতে থাকার মেয়াদ। এদিকে, হেফাজতের মেয়াদ বাড়ার নির্দেশ শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল সুকন্যা মণ্ডলকে। সূত্রে খবর, শরীর খারাপ থাকায় শুক্রবার সশরীরে হাজির করা হয়নি অনুব্রত মণ্ডলকে। এরপর সুকন্যা এবং সায়গলকে তোলা হয় রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে।
প্রসঙ্গত, গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। এরপর একটি পৃথক চিত্র সামনে এসেছিল। সেসময় একদিকে তখন দোরগড়ায় ছিল পঞ্চায়েত ভোট। যখন অনুব্রতহীন বীরভূমে জনসংযোগ যাত্রায় ঝড় তুলছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে ঠিক তখনই অন্যভাবে দেখা গিয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। বেতন পাচ্ছেন না কর্মীরা, চাল কলের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তিহাড় থেকে আসানসোল আদালতে আবেদন করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল।
অপরদিকে, দীর্ঘ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পর দোলপূর্ণিমার দিন দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গরুপাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলকে। ইডি হেফাজত শেষে তিহাড় জেলে যান বীরভূমের দাপুটে জেলা তৃণমূল সভাপতি। এদিকে গ্রেফতার হন অনুব্রতর হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি। তাঁকেও তিহাড় জেলে পাঠানো হয়। তবে আসানসোল থেকে তিহাড় জেলে যাওয়ার পর, ফের আসানসোলে ফেরার জন্য় দিল্লির আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল।
ওই মামলার শুনানিতেই অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী সওয়াল করেছিলেন, অনুব্রতর দিল্লিতে থাকার আর কোনও প্রয়োজন নেই। এদিকে অনুব্রতর জেল হেফাজত ক্রমশই বেড়ে চলছে। এরপর তাঁকে আসানসোল জেলে ফেরানো হোক, এমনই আর্জি ফেরানো হোক। পাল্টা সওয়ালে ইডির তরফে বলা হয়, অভিযুক্ত ঠিক করতে পারেন না, তিনি কোন জেলে থাকবেন। তিহাড়কেই ঘরবাড়ি ভাবতে শুরু করুন। আরও ৩-৪ বছর থাকতে হতে পারে জেলে। দিল্লির রাউস অ্য়াভিনিউ কোর্ট অনুব্রত মণ্ডলের আবেদন খারিজ করে মে মাসে জানানো হয়েছিল, এই আবেদনে কোনও সারবত্তা নেই। যদিও মার্চ পেরিয়ে, মে মাস পেরিয়ে অগাস্টে পা। যদিও একই তিমিরে অনুব্রত। ফের অসুস্থ গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। আদালতের শুনানি চলাকালীন বাবার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে ভরা এজলাসেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল।
আদালত সূত্রে খবর , এদিন দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে গরু পাচার মামলায় অভিযুক্তদের শুনানি ছিল। সেখানে সশরীরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন, বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমার এবং অনুব্রতকন্যা সুকন্যা মণ্ডলের। ভারচুয়ালি হাজিরা দেন এনামুল হক, মণীশ কোঠারি এবং অনুব্রত। এদের সকলকেই আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।
এদিন সবার আগে আদালত চত্বরে হাজির করা হয় সুকন্যাকে। এরপর আসেন সায়গল। তাঁকে দেখে সুকন্যা তাঁর বাবার কথা জানতে চান। তাতে সায়গল তাঁকে জানান, অনুব্রত অসুস্থ। তাঁকে জেল হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। বাবার অসুস্থতার খবর শুনেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলতে দেখা যায় সুকন্যাকে। যদিও জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনুব্রতকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়নি। তাঁকে ৩ নম্বর সেলে সরানো হয়েছে। মাঝে একবার অসুস্থতার জন্য জেল হাসপাতালের ভরতি করা হয়েছিল। তারপর তাঁকে আর ৭ নম্বর সেলে পাঠানো হয়নি। তবে গরু পাচার মামলায় বাকি অভিযুক্তরা এখনও ৭ নম্বর সেলেই রয়েছেন।
ঘটনাচক্রে এই ৩ নম্বর সেলে রাখা হয় শুধু দোষী সাব্যস্তদের। অনুব্রতর আইনজীবীদের কোনওরকম তথ্য না দিয়েই তাঁকে জেল কর্তৃপক্ষ ৩ নম্বর সেলে সরিয়ে দেওয়া হয়। কেন এমন করা হল, সেটা জানতে চেয়ে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেছিলেন অনুব্রতর আইনজীবী। কিন্তু জেলের সার্ভার খারাপ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।