লোকসভা নির্বাচনের পর বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের তৃণমূলের মেগা প্ল্যাটফর্ম নিঃসন্দেহে এই শহিদ দিবস। আর সেই মঞ্চকেই ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় দলীয় কর্মী নেতাদের দিলেন একাধিক বার্তা। এদিন দলীয় নেতাদের উদ্দেশেই মমতা বলেন, ‘যেখানে যেখানে জিতেছেন, ভাল করে মানুষকে গিয়ে ধন্যবাদ জানাবেন। যেখানে পারবেন না, দলকে জানাবেন।’ আর যেখানে জিততে পারেনি তৃণমূল, সেখানকার মানুষের কাছেও ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে আমরা জিতিনি, সেখানে ঘরে ঘরে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন, হয়তো আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে কোথাও খামতি ছিল। আগামী দিনে দেখব।’
তবে এই প্রথম নয়, মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দলীয় নেতা কর্মীদের কাছে আগেও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করলে প্রয়োজনে আপনার বাড়িতে গিয়ে বাসনও মেজে দেব।’ এ নিয়ে চর্চা কম হয়নি বঙ্গ রাজনীতিতিতে। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেছিলেন, এটা নিতান্তই আই ওয়্যাশ, নজর ঘোরানোর চেষ্টা। কারণ, নানা দুর্নীতিতে যখন একের পর এক নেতা মন্ত্রী গ্রেফতার হচ্ছেন, তখন মমতার কাছে মুখ্য চ্যালেঞ্জ ছিল দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করা। আর সেই ড্য়ামেজ কন্ট্রোলে নেত্রী যে সমর্থ হয়েছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছে লোকসভার নির্বাচনের ফলও। লোকসভা নির্বাচনে ল্যান্ডস্লাইড জয় পেয়েছেন মমতা। কিন্তু এখনও মমতার মুখে সেই বিনয়ের কথাই। জয়ের উচ্ছ্বাসে যাতে বাঁধনহারা হয়ে না পড়েন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সে কারণেই এই বার্তা। এদিন তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘তৃণমূল মানুষের সামাজিক বন্ধু হবে। আমি বিবেকবান চাই, বিত্তবান চাই না। পয়সা আসে, চলে যায়। সেবার কোনও বিকল্প নাই।সব পৌরসভা, পঞ্চায়েত, এমএলএ, এমপি, প্রধান সবাইকে বলব, কারোর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ যেন কেউ না পায়। যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, আমরা কিন্তু উপযুক্ত অ্যাকশন নেব। গরিব থাকুন, যা আছে ঘরে, তাই খেয়ে বেঁচে থাকুন। তাহলেই আপনাদের কেউ সরাতে পারবে না।’
এরই পাশাপাশি মানুষকে এগিয়ে রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাতে বলেন, ‘মানুষকে স্যালুট। যাঁরা ভোট দেননি, তাঁদের কাছেও সমর্থন আশা করব। সাধারণ মানুষ ছাড়া আমরা চলতে পারব না। আমরা যত জিতব, আমাদের নরম হতে হবে, দায়িত্ব বাড়বে, মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারব।’
এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার একাধিক মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে যে কোনও ভাবেই আর আপোশ নয়, তার বার্তা দিয়েছেন। এসবের পরেই অতি সাম্প্রতিক অতীতে উঠে এসেছে আড়িয়াদহের জেসিবি, সোনারপুরের জামালদের নাম। তাঁর প্রাসাদপম বাড়ি। বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘ওঁরাই নাকি তৃণমূলের সম্পদ।’ আর তারই পাল্টা বার্তা দিতে মমতা এদিন বলেন,, ‘বিত্তবান চাইনা, বিবেকজ্ঞান চাই।’
এদিকে আবার জমি দখল, বেআইনি নির্মাণ, কাটমানি-সহ একাধিক অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল। দলের নেতাকর্মীদের দুর্নীতির দায় মুছে ফেলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কেউ যেন আপনাদের লোভী বানাতে না পারে, ভাত রুটি খেয়ে থাকবেন, কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করবেন না।’ জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে বলেন, ‘যাঁরা ইলেক্টেড হয়ে পরিষেবা দেবেন না, তাঁদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখব না। সব পৌরসভা, পঞ্চায়েত, এমএলএ, এমপি, প্রধান সবাইকে বলব, কারোর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ যেন কেউ না পাই। যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, আমরা কিন্তু উপযুক্ত অ্যাকশন নেব। গরিব থাকুন, যা আছে ঘরে, তাই খেয়ে বেঁচে থাকুন। তাহলেই আপনাদের কেউ সরাতে পারবে না।’
এখানেই শেষ নয়, অত্যন্ত সহজ, সোজা সাপটা ভাষায় দলীয় কর্মীদের সচেতন করতে দেখা গেছে তৃণমূল সুপ্রিমোকে কোথাও কোনও রাখঢাক না রেখেই। বড় গাড়ির বদলে, স্কুটার, সাইকেলে ঘোরার পরামর্শ দেন মমতা। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সভামঞ্চে বক্তৃতা রাখছিলেন, তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল। মমতা বলেন, ‘কী বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু গায়ে লাগবে! একবার স্নান করব, বৃষ্টির জল ধুয়ে যাবে। কিন্তু নোংরা মনে লাগলে, ধোয়া যাবে না।’