ছেলেক খুনের ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ আরাবুল

ছেলেকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ, এমনই অভিযোগ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরনাপন্ন হলেন ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ছেলে এবং তাঁর আরও নিরাপত্তার প্রয়োজন। শনিবার আরাবুল বলেন, ‘‘আমার ছেলে হাকিমুল ইসলামকে মেরে ফেলার টার্গেট করছে আইএসএফ। তাই নিরাপত্তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেব।’ তবে এমন ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিতর্কিত এই তৃণমূল নেতার কথায় পাত্তা দিতে নারাজ নওশাদ সিদ্দিকির দল। আইএসএফের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে আদতে এটা আরাবুলের প্রচার পাওয়ার এক কৌশল মাত্র।

প্রসঙ্গত, এবার পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের আসন থেকে জয়ী হন হাকিমুল। শাসকদলের দাপুটে নেতার ছেলে হাকিমুল শাসকদলের যুব নেতাও। কিন্তু তাঁকে বারবার হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে, এই অভিযোগ জানানোর পর গত জুলাই মাসে তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়। আগে আরাবুলও তাঁর নিরাপত্তার জন্য দু’জন দেহরক্ষী পেতেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর আরও একজন দেহরক্ষী পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে আরাবুলের এখন তিন জন দেহরক্ষী। ছেলে হাকিমুলের নিরাপত্তায় আছেন এক জন। এখানেই বাড়তি নিরাপত্তার দাবি করেছেন আরাবুল। এই প্রসঙ্গে আরাবুল এও জানান, গত বৃহস্পতিবার ভাঙড়-২ ব্লকে স্থায়ী সমিতির মিটিংয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। এরপরই আরাবুল জানান, ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমি চিঠি পাঠব। কারণ, ভাঙড়ের আইএসএফের লোকেরা আমাকে এবং ছেলেকে মেরে ফেলার টার্গেট নিয়েছে।’

এই পঞ্চায়েত ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের রাজনীতিতে আরাবুলের প্রভাব নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। আরাবুলও কিছুদিন আগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন যে, দলীয় সভায় যেতে তাঁকে নিষেধ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় বিরোধীদের দাবি, ভাঙড়ে শাসকদলের অন্দরে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। এরপরই প্রশ্ন ওঠে, ভাঙড়ে কি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন আরাবুল কি না  তা নিয়েই। বর্তমানে ভাঙড় থেকে আইএসএফের প্রভাব কমাতে তৃণমূল নেতৃত্ব ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সম্প্রতি আবার শওকতকে সহযোগিতা করতে বিধাননগরের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তকেও আনা হয়। ফলে ভাঙড়ের রাজনীতিতে যে আরাবুল এবং তাঁর পরিবারের গুরুত্ব অনেকটাই কমেছে, মেনে নিচ্ছেন দলের একাংশ।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ঝড়ের সামনে তৃণমূলের যে ৩০ জন বিধায়ক জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদের এক জন ছিলেন আরাবুল। সেই সময় সিপিএমের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে দেখা যেত তাঁকে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর ভাঙড় কলেজের এক অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুঁড়ে মেরে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। তার পরেও ভাঙড়ের রাজনীতি তো বটেই, রাজ্য-রাজনীতিও তাঁর দাপট দেখেছে। এই আরাবুলকে এক সময় মদন মিত্র (কামারহাটির বিধায়ক) ‘তাজা নেতা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ২০১৫ সালে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূল থেকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল আরাবুলকে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 6 =