২১ জুলাইয়ের দিনই সকালে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির গলিতে সশস্ত্র যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর, কালীঘাটে চার মাথার মোড়ে একটি ছোট কালো গাড়ি আটকায় পুলিশ। গাড়িতে আটকানো ছিল পুলিশ লেখা স্টিকার। এই গাড়ির মধ্যেই মেলে ছুরি ও ভোজালি। তাঁকে আটক করে কালীঘাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পরে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানান, গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ভোজালি, আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকও। জানা গিয়েছে, ধৃত যুবকের নাম নূর আলম।
পুলিশ সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, এদিন সকালে কালো গাড়িতে করে ওই যুবক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির গলিতে ঢোকার চেষ্টা করে। অনেকটাই কাছাকাছিও পৌঁছে যায় সে। এদিকে ২১ জুলাই উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা ছিল কালীঘাট চত্বর। হঠাৎ এই গাড়িটি আসতে দেখেই আটকায় পুলিশ। এরপরই গাড়ির ভিতরে অস্ত্র দেখতে পায় তারা। এদিকে ওই যুবক প্রথমেই নিজেকে পুলিশ কর্মী বলে পরিচয় দেয়। এরপরই তাঁর পরিচয়পত্র চাওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, দেখা যায় ওই পরিচয় পত্র ভুয়ো। এরপরই আটক করা হয় তাঁকে।
একইসঙ্গে তদন্তে বিভ্রান্ত করারও চেষ্টা করার চেষ্টাও করেতে থাকে ওই যুবক। কখনও বলছে তিনি আনন্দপুরে থাকেন, কখনও বলছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে থাকেন। তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের বিভ্রান্ত করা শুরু করতেই গ্রেফতার করে কালীঘাট থানার পুলিশ।
এর আগেও কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবক ঢোকার চেষ্টা করেন। পশ্চিম মেদিনীপুরেও তাঁর গাড়ির সামনে একজন চলে এসেছিলেন। বারবার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এদিকে আজ ২১ জুলাই। শহরজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়। সেই ভিড়ের মাঝে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাকেও প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ, একজন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে অস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতী ঢোকার চেষ্টা করলেও, সেটা অনেক বড় ঘটনা।
এ প্রসঙ্গে কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল বলেন, ‘বিভিন্ন এজেন্সির আইকার্ড রয়েছে ওই যুবকের কাছে। আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি কোথা থেকে এ ধরনের পরিচয়পত্র পেলেন, তাও জানার চেষ্টা চলছে। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, যেখানে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন, সেখানে উনি দেখা করতে যাচ্ছিলেন। অথচ সঙ্গে ছিল ভোজালি, আগ্নেয়াস্ত্র, কিছু গাঁজা। ফলে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে উনি এসেছিলেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। ইতিমধ্যেই এসটিএফ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং স্থানীয় থানা তদন্ত করছে। ওনাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।’ একইসঙ্গে নগরপাল বিনীত গোয়েল এও জানান, এমনকী রাজ্য পুলিশের সিনিয়র আধিকারিকরা যে পোশাক পরেন, সেই উর্দিও ছিল গাড়িতে। বিএসএফের আইকার্ড ছিল বলেও জানান কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল। প্রথমে কালীঘাট থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অফিসাররা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে গ্রেফতার করা হয়। নূর নিজেই গাড়িটি চালিয়ে আসেন। গাড়ির নম্বর ডব্লিইবি ০৬ ইউ ০২৭৭।
এরপর তদন্ত শুরু হতে সামনে আসে হিউম্যান রিসোর্স প্রফেসনাল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত এই নূর। গাড়ি ও বাইকে লেখা রয়েছে এইচআরপিএ মেম্বার। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, নূর আমিনের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায়। তবে কলকাতার আনন্দপুরে থাকেন। নূর ইন্টেরিয়র নামে তাঁর একটি সংস্থাও রয়েছে। এলাকায় তাঁর পরিচিতি মানবাধিকার কর্মী হিসাবে। নূর আমিনের যে গাড়ি, তাতে আবার অশোকস্তম্ভের ছবি। রজনীগন্ধার মালা জড়ানো তাতে। ইতিমধ্যেই গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।