বেঙ্গালুরুতে উদ্বোধন হল থ্রি-ডি প্রিন্টেড পোস্ট অফিস

‘এই শহর সর্বদাই ভারতের এক নতুন ছবি উপস্থাপন করে। এই থ্রি-ডি-প্রিন্টেড পোস্ট অফিস ভবনের মধ্যে আজকের ভারতের মেজাজটা ধরা পড়েছে। এই মেজাজেই আজ এগিয়ে চলেছে ভারত। এটা উন্নয়নের চেতনা, নিজস্ব প্রযুক্তির বিকাশের চেতনা। দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো এক নেতৃত্ব আছে এবং জনগণের তার উপর আস্থা রাখে বলেই দেশ এই জায়গায় পৌঁছেছে।’ প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, গত নয় বছরে দেশে অনেক নতুন প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছ। থ্রি-ডি প্রিন্টেড কংক্রিটের ভবনটিও তারই নিদর্শন।’ শুক্রবার, বেঙ্গালুরুতে ভারতের প্রথম থ্রি-ডি প্রিন্টেড পোস্ট অফিস ভবনের উদ্বোধন করতে গিয়ে এমনটাই জানালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সঙ্গে এও জানান, বেঙ্গালুরু সবসময়ই বাকি ভারতকে নতুন পথ দেখায়। আইআইটি মাদ্রাজের সহায়তায় এই নয়া প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো হল। প্রসঙ্গত, বেঙ্গালুরুর কেমব্রিজ লেআউটের এক হাসপাতালের পাশেই এই নয়া পোস্ট অফিস ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। গত এপ্রিলেই এই ভবনটির নির্মাণের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন অশ্বিনী বৈষ্ণব। লারসেন অ্যান্ড টুব্রো এই ভবনটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল। ১১০০ বর্গফুটের ভবনটি তৈরি করতে সময় লেগেছে মাত্র ৪৫ দিন, খরচ পড়েছে ২৩ লক্ষ টাকা। ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ভারতের প্রথম থ্রি-ডি-প্রিন্টেড বাড়ির উদ্বোধন করেছিলেন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি মাদ্রাজের ক্যাম্পাসে ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়িগুলি তৈরির ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুপারিশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, নয়া এই প্রযুক্তিতে সাদা কাগজে আমরা যেমন লেখা প্রিন্ট করি, তেমনই এই ক্ষেত্রে কম্পিউটারে কোনও ভবনের নকশা দিয়ে, সেই নকশা অনুযায়ী কংক্রিটের কাঠামো প্রিন্ট করা হয়। থ্রি-ডি কংক্রিট প্রিন্টিং-এর ক্ষেত্রে একটি বিশেষ কংক্রিটের মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণটি যাতে দ্রুত শুকিয়ে যায়, তার জন্য এতে এক বিশেষ ধরনের আঠা মেশানো হয়। এই মিশ্রনটিকে বলা যেতে পারে থ্রি-ডি কংক্রিট প্রিন্টিং-এর কালি। এরপর, ওই মিশ্রণকে যন্ত্রে ঢালা হয়। থ্রি-ডি কংক্রিট প্রিন্টিং যন্ত্রের দুটি অংশ আছে। একটি যন্ত্রে দৈত্যাকার ক্রেনের সাহায্যে প্রিন্টারটিকে আনুভূমিক রাখা হয়। দ্বিতীয় অংশটি হল একটি রোবোটিক হাত। কম্পিউটারে যে নকশা দেওয়া থাকে, রোবোটিক হাতটি থেকে সেই নকশা অনুযায়ী মিশ্রণ বের হয় এবং নকশা মেনে স্থাপত্যটি সংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, থ্রি-ডি কংক্রিট প্রিন্টিং-এ নির্মাণের সময় ও খরচ দুই কমে যায়। থ্রি-ডি কংক্রিট প্রিন্টিং-এর ক্ষেত্রে নির্মাণের সময় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম লাগে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্মাণের খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। কিন্তু, প্রচলিত পদ্ধতির নির্মাণ প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের মজুরির বাড়তি খরচ লাগে। তাই, থ্রি-ডি কংক্রিট প্রিন্টিং-এর ক্ষেত্রে খরচ সামান্য হলেও কম হয়। একই সঙ্গে থ্রি-ডি কংক্রিট প্রিন্টিং সম্পূর্ণ ডিজিটাল নিয়ন্ত্রিত হওয়ায়, একই নকশার একাধিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =