হকারদের কাছ থেকে তোলা ওঠে বছরে কমপক্ষে ২৫০ কোটি, দাবি শক্তিমানের

কলকাতা এবং তার লাগোয়া শহরাঞ্চলের হকারদের কাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ২৫০ কোটি টাকা তোলা আদায় হয়। যার একটা অংশ যায় পুলিশের কাছে। বাকিটা পান স্থানীয় নেতা ও মস্তানরা। এমনই অভিযোগ জাতীয় হকার ফেডারেশনের নেতা শক্তিমান ঘোষের। তাঁর দাবি, ইনকামের পথ প্রশস্ত করতেই ফুটপাথে যত্রতত্র হকার বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশকে টাকা দিয়ে অনেকে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করছেন। কিছু অসাধু লোকের জন্য বদনাম হচ্ছে গোটা হকার সমাজের।

এদিকে গত সোমবার নবান্নে বিভিন্ন পুরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান এবং পুর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে টাকার বিনিময়ে ফুটপাথে হকার বসানোর অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই ফুটপাথকে দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এই আবহে নেতাদের তোলা আদায় নিয়ে সরব হয়েছেন হকার নেতারা। হকারদের অবিলম্বে লাইসেন্স দেওয়ার দাবিও তুলছেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গে জাতীয় হকার ফেডারেশনের নেতা শক্তিমান ঘোষ জানান, ‘লাইসেন্স দেওয়া হলে তাদের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যাবে। লাইসেন্স ফি থেকে পুরসভাগুলিরও রোজগার বাড়বে।’ প্রায় একই সুর সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহুর গলাতেও। তিনি জানান, ‘কলকাতায় প্রতি বর্গফুটে হকারদের টাকা দিতে হয়। কাউন্সিলার থেকে শুরু করে পাড়ার দাদা, পুলিশ সেই টাকার ভাগ পায়। লাইসেন্স হয়ে গেলে এই গুণ্ডামি বন্ধ হয়ে যাবে।’

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘বাম আমল থেকে চাঁদা নেওয়া শুরু হয়। সেটাই আরও ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে।’ বিভিন্ন সূত্রে খোঁজখবর নিয়ে জানা গিয়েছে, ধর্মতলা, শিয়ালদহ, বড়বাজারের মতো জায়গায় হকারদের দৈনিক গড়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। আইন অনুযায়ী, একজন হকার সর্বোচ্চ ২৪-২৫ বর্গফুট জায়গা নিয়ে বসতে পারেন। তার জন্য মাসে ৩০০০-৩৫০০ টাকা আদায় করে ইউনিয়ন। ডালার আয়তন বেশি হলে টাকার পরিমাণও বেড়ে যায়। হকারদের মধ্যে নেতা গোছের কেউ একজন সবার কাছ থেকে টাকাটা তুলে রাখেন। বিনিময়ে কোথাও কোথাও কাঁচা রসিদ দেওয়া হয়। রাতের দিকে ব্যবসা গোটানোর আগে সেই টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে যান কোনও এজেন্ট। তাদের বলা হয় কালেক্টর। তিনি টাকাটা তুলে যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেন। এই তোলা আদায়ের হিসেব রাখার জন্য ফুটপাথের উপর সোফা পেতে অস্থায়ী অফিসও করা হয়। কিছু জায়গায় আবার সিভিক পুলিশের ছেলেরা হকারদের থেকে টাকা কালেকশন করে বলেও অভিযোগ। বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী, কলকাতা এবং আশপাশের শহরতলি মিলিয়ে আনুমানিক ২ লক্ষের মতো হকার রয়েছে। তাদের কাছ থেকে রোজ গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা আদায় হয়। ডালা হাতবদল হলেও ২-৩ লক্ষ টাকা কমিশনও দিতে হয়। ধর্মতলার ফুটপাথে আবার এক-একটি ডালা বিক্রি হয় ৫-৬ লক্ষ টাকায়। কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুটপাথে হকার বসানো নিয়ে বছর খানেক আগে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে চিঠি দিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, হকার ইউনিয়ন ও পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। পুলিশ হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেয় বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছিল। ফিরহাদের কথায়, ‘পুলিশ যে হকারদের থেকে মাসোহারা নেয় তার প্রমাণ হয়তো আমি দেখাতে পারবো না, তবে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট খবর আছে। পুলিশ জানে না, এটা হতেই পারে না। পুলিশ মনে করলে একদিনে এই সমস্যা মিটে যেতে পারে।’

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − 9 =