ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে বাংলাদেশ। টানা তিনদিন ধরে কারফিউ চলার পর, বুধবার অর্থাৎ ২৪ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা, গাজিপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় শিথিল করা হয়েছিল কারফিউ। একইভাবে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৫ জুলাই ঢাকা-সহ পাশ্ববর্তী তিন জেলায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল থাকবে কারফিউ। এছাড়া অন্যান্য জেলাতেও জেলাশাসকদের অনুমতিক্রমে কারফিউ শিথিল রাখা হবে। এদিকে, ঢাকা-সহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত চিকিৎসাধীন আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এর ফলে, প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোটা বিরোধী আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২০১-এ।
বুধবার কারফিউ শিথিল করার পরই বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, কল-কারখানাগুলি সীমিত পরিসরে খুলেছিল। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, এদিনও সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত অফিসগুরলি খোলা থাকবে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও অধিকাংশ জায়গাতেই ফের চালু হয়েছে। তবে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার এখনও বন্ধ রয়েছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেনজির হিংসায় লাগাম টানতে, গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকেই সারাদেশে কারফিউ জারি করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। কারফিউ পরিস্থিতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে মোতায়েন করা হয়েছিল সেনাবাহিনীকে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) থেকে, কারফিউ শিথিলের সময় স্বল্প দূরত্বের কিছু যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে বলে জানা গিয়েছে। গত শনিবার থেকেই বন্ধ ছিল রেল পরিষেবা।
এদিকে, কোটা আন্দোলন প্রশমিত হওয়ার পর এখন শুরু হয়েছে ধর-পাকড়ের পালা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এই আন্দোলনকে হিংসাত্মক আকার দিয়েছিল কিছু দুষ্কৃতী, এমনটাই দাবি হাসিনা সরকারের। সাধারণ মানুষের কাছে এই দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। বুধবার ২৪ জুলাই এই বিষয়ে নাগরিকদের এসএমএস করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর। নাশকতার সময়ের ছবি-ভিডিয়ো ফুটেজও তাদের কাজে লাগবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তথ্য প্রদানকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে।
এদিকে বুধবার বিকেলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। এই আন্দোলনে যত প্রাণহানি হয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা-সহ সারা দেশে হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের তালিকা তৈরি করছে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। তালিকা ধরে ধরে সবাইকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন এক পদস্থ পুলিশ কর্তা। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, ভিডিয়ো, ছবি দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইন্টারনেট–সংযোগ বন্ধ হওয়ার আগে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক সামগ্রী পোস্ট করেছে, তাদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে। বুধবার রাত পর্যন্ত শুধু ঢাকাতেই ১,৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।