একের পর এক নতুন প্রযুক্তি আনছে বা এনেই চলেছে কলকাতা মেট্রো। এককথায় নতুন প্রয়ুক্তি আনার পথে কলকাতা মেট্রো সবার কাছেই একটা দৃষ্টান্ত। এশিয়ার প়ঞ্চম মেট্রো হিসেবে কলকাতার এই মেট্রো ৩৯ বছর তার দীর্ঘ যাত্রা অতিক্রম করেছে। যেখানে প্রযুক্তির দিক দিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলির মেট্রোর সঙ্গে এটি সমকক্ষ বলেই দাবি করছেন মেট্রো রেলের জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। এই প্রসঙ্গে কৌশিকবাবু এও জানাচ্ছেন, মেট্রো শুধু তার বিস্তৃতি-ই ঘটাচ্ছে এমন নয়, একই সঙ্গে নজর রাখা হচ্ছে যাত্রী স্বাচ্ছন্দের দিকেও।
যেমন দক্ষিণেশ্বর-কবি সুভাষ রুটে মেট্রোয় এ বার বসানো হচ্ছে ‘ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম’ (বিইএসএস)। দেশের মধ্যে প্রথম কলকাতা মেট্রোয় এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলেও সুড়ঙ্গের মধ্যে আর মেট্রোর রেক আটকে পড়বে না। এই পদ্ধতির সাহায্যে পরের স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে মেট্রোর রেককে। গ্রিড বিপর্যয় হলেও মেট্রো চলাচলে সমস্যা হবে না। আগামী এক বছরের মধ্যেই এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। রবিবার এই পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, ইনভার্টার এবং অ্যাডভান্স কেমেস্ট্রি সেল ব্যাটারির সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। হঠাৎ যদি বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে, তা হলে এই পদ্ধতির সাহায্যে মেট্রোর রেককে পরের স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে। অর্থাৎ সুড়ঙ্গের মধ্যে আর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না মেট্রোকে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, এটা পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা।
নোয়াপাড়া, শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল এবং যতীন দাস পার্ক, এই চারটি সাবস্টেশনে বসানো হবে এই প্রযুক্তি। চার মেগাওয়াট চার কোয়াড্রেন্ট ইনভার্টার চালুর জন্য চলতি মাসের ১১ তারিখ একটি দরপত্র প্রকাশ করেছে কলকাতা মেট্রো। ওই ইনভার্টারগুলিতে শক্তি সঞ্চয়ক উপাদান হিসাবে থাকবে লিথিয়াম আয়রন ফসফেট (এলএফপি) অথবা লিথিয়াম টাইটেনিয়াম অক্সাইড (এলটিও)। ওই চারটি মেট্রো স্টেশনে এক মেগা ওয়াটের ইনভার্টার বসানো হবে। এই ব্যবস্থার ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে, এমনকি যদি গ্রিড বিপর্যয় ঘটে, তা হলে সুড়ঙ্গে আর আটকে পড়বে না মেট্রোর রেক। ঘণ্টায় ১৫-২০ কিমি গতিতে মেট্রোর রেকটিকে পরের স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে নিরাপদে যাত্রীদের মাঝ-সুড়ঙ্গ থেকে নিয়ে আসা যাবে। রাতে এলএফপি এবং এলটিও ব্যাটারিগুলি চার্জ দেওয়া যাবে।
শুধু যাত্রী সুরক্ষাই নয়, মেট্রোর বিদ্যুৎ খরচেও সাশ্রয় হবে এই ব্যবস্থায়। ব্যস্ত সময়ে মেট্রো চালাতে ৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। বিইএসএস ব্যবস্থায় চার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা জোগাবে। ফলে ব্যস্ত সময়ে মেট্রো চালানোর জন্য কম পরিমাণে বিদ্যুৎ কিনতে পারবেন কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর খরচ অনেকটাই কমবে। মেট্রো চলাচালের ব্যস্ত সময়ে বছরে ২৫ লক্ষ টাকা সাশ্রয় করতে পারবে এই ব্যবস্থা। অন্য সময়ে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হতে পারে।