ডাঃ তমাল বিশ্বাস
সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ একটি জটিল অসুখ। আর দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দিনদিন এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু তারপরও জনমানসে এই অসুখ নিয়ে তেমন একটা সচেতনতা নেই। ফলে শরীরে এই অসুখের লক্ষণ থাকার পরেও রোগীরা প্রথমাবস্থায় চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না। আর সেই কারণে তলেতলে বিপদ আরও বাড়ছে। তাই সমস্যা জটিল দিকে মোড় নেওয়ার আগেই এই অসুখ নিয়ে সাবধান হতে হবে। এমনকী আগেভাগে জেনে নিতে হবে এই রোগের লক্ষণ।
বিশেষজ্ঞকরা এই লক্ষণ নিয়ে জানাচ্ছেন, সিওপিডি হল ফুসফুসের অসুখ। এক্ষেত্রে ফুসফুসে ক্রনিক বা দীর্ঘকালীন প্রদাহ হয়। আর সেই কারণে এই অঙ্গে ঠিকমতো বায়ু চলাচল করতে পারে না। যার ফলে ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে ফুসফুস। সেই সঙ্গে শরীরে ফুটে ওঠে একাধিক লক্ষণ। এমনকী এই রোগের কারসাজিতে হার্টের অসুখ, লাং ক্যানসার এবং অন্যান্য রোগের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে বিপদ। তাই বিপদ ঘটার আগেই সিওপিডি নিয়ে সাবধান হন।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সিওপিডি-তে আক্রান্তের শরীরে দেখা দেয় বেশ কিছু উপসর্গ। যেমন,
১. শ্বাসকষ্ট হতে পারে, বিশেষত শারীরিক পরিশ্রম করার সময় আরও বাড়তে পারে সমস্যা
২. টান উঠতে পারে
৩. বুকে চাপচাপ লাগাও সম্ভব
৪. অনেকদিন ধরে থাকতে পারে কাশি
৫. কাশির সঙ্গে অনবরত সাদা, হলুদ বা সবুজ রঙের কফ বেরতে পারে
৬. বারবার রেসপিরেটরি ইনফেকশন হতে পারে
৭. দেখা দিতে পারে এনার্জির ঘাটতি
৮. রোগ গড়িয়ে গেলে দ্রুত কমতে পারে ওজন
৯. পায়ের পাতা, গোড়ালি ফুলে যেতে পারে।
তাই এই ধরনের কোনও লক্ষণ দেখলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নইলে যে সমস্যার শেষ থাকবে না।
এই সিওপিডি সমস্যার নেপথ্যে রয়েছে ধূমপান। তাই প্রথমেই ছাড়তে হবে ধূমপান। তবে শুধু ধূমপান নয়, এর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ধুলোয় কাজ করলে, কোনও নির্দিষ্ট রাসায়নিক বাতাসের মাধ্যমে নিয়মিত শরীরে প্রবেশ করলে, এমনকী অ্যাজমা থাকলে, পরিবারে কারও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলেও সিওপিডি-এর ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে।
তবে প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে এই অসুখকে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক্ষেত্রে ইনহেলার হল মূল ওষুধ। সেই সঙ্গে প্রয়োজন মতো মুখে খাওয়ার ওষুধও দিতে পারেন চিকিৎসক। এছাড়াও ধূমপান সঙ্গে এড়িয়ে চলতে হবে ধুলো-ধোঁয়া। তার পাশাপাশি বাইরে বেরলে মাস্ক পরা জরুরি। আশা করছি, এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই আপনার সুস্থ থাকার পথে আর কোনও বাধা আসবে না।
রোগ প্রতিরোধে জোর দিতে মানতে হবে কিছু পদক্ষেপঃ
১. সবার প্রথমে সিগারেট, বিড়িতে টান দেওয়ার অভ্যাসে ইতি টানুন
২. ধুলো-ধোঁয়ায় থাকবেন না
৩. অ্যাজমা থাকলে নিয়মিত ইনহেলার নিন
৪. রোজ শাক, সবজি খান
৫. প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করুন
ব্যস, এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই আপনাকে আর জ্বালাতে পারবে না সিওপিডি। তাই এখন থেকেই এসব নিয়ম মেনে চলুন।