আরজি কর ইস্যুতে পাঁচ দিবসীয় ধরনা মঞ্চে বঙ্গ বিজেপির ত্রয়ী

আরজি করের মতো জ্বলন্ত ইস্যুতেও বঙ্গ বিজেপির আন্দোলনের ঝাঁঝ এখনও তেমনভাবে নজর কাড়েনি। এ রাজ্যের পাশাপাশি প্রায় গোটা বিশ্বে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় বিক্ষিপ্তভাবে বঙ্গ বিজেপি পথে নামলেও লোকসভা ভোটে পরাজয়ের ‘দায়’ না নেওয়া প্রথম সারির তিন পদ্ম নেতা সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপ এই ত্রয়ী বুধবার থেকে আরজি কর ইস্যুতে বসতে চলেছেন টানা পাঁচ দিবসীয় আন্দোলনের এক মঞ্চে। বঙ্গ বিজেপির আরও অনেকেই থাকবেন সেই মঞ্চে। তবে মূল ফোকাসে পদ্মের তিন মুখ। সুকান্ত, শুভেন্দু আর দিলীপ।

লোকসভা ভোটের পর ফলাফল নিয়ে নাম না করে যে নেতাদের একে অপরকে ‘আক্রমণ’ শানাতে দেখা গিয়েছিল এবার সেই তিন নেতা‌ সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপ ঘোষরা লোকসভা ভোটের ফলাফল সামনে আসার পর পরই সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষের মধ্যে একটা ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে। এমনটাই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, ‘ভোটে জিতলেই সকলে বলত সংগঠন দারুণ মজবুত। তবে ভোটে সংগঠনের কাজ শুধু ২৫ শতাংশ।’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘আমি বিরোধী দলনেতা। সংগঠনের আমি কেউ নয়। দল আমায় যে কাজ করতে বলেছিল আমি সেই দায়িত্ব পালন করেছি।’’ আর দিলীপ ঘোষ তাঁর পরাজয়ের নেপথ্যে দলের একাংশের বিরুদ্ধেই ‘কাঠিবাজি’ চক্রান্তের বিস্ফোরক অভিযোগে সরব হন। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর বিপর্যয়ের দায় এভাবেই একে অপরের ঘারে চাপাতে মরিয়া ছিলেন বা এখনও আছেন সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপরা।‌

গত লোকসভা ভোটে এই তিন নেতার ‘লবি’র কারণেই যে বঙ্গে বিজেপি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে ‌ বলেই বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়। লোকসভা ভোটের ফলাফল বেরোনোর কয়েকদিন পরেই তিনি যে সংগঠনের কেউ নন, ভোট বিপর্যয়ের দায় যে তাঁর নয়, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়ে কিছুটা অভিমানের সুরেই শুভেন্দুকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি সব কিছু ছেড়ে বিজেপিতে এসেছি। সবাই আমাকে পুরস্কার দেয় না। তিরস্কার দিতে পারে। অনেকে অনেক কিছু পোস্ট করতে পারেন, তির্যক মন্তব্যও করতে পারেন। ভাল হলে নিজেদের ক্রেডিট দেন, আর খারাপ হলে আমার ঘাড়ে চাপান।’

শুভেন্দু এও বলেছিলেন, ‘ভোটে দল আমাকে যা দায়িত্ব দিয়েছিল তা আমি পালন করেছি।’ পাল্টা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘ভোটে ভাল ফল হলেই সকলে বলত যে, সংগঠন দারুণ মজবুত। ভোটে পরাজিত হলে অনেকেই অনেক কিছু বলেন। ‌তবে ভোটে সংগঠনের কাজ শুধু ২৫ শতাংশ থাকে।’

অন্যদিকে দিলীপ ঘোষ গত লোকসভা ভোটে তাঁর এবং তাঁর দলের ভরাডুবির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাম না করে সুকান্ত- শুভেন্দুদেরই নিশানা করেছিলেন। বলা বাহুল্য, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৩৫টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। সেই ফলাফল নিয়ে এখনও কাটাছেঁড়া চলছে বিজেপিতে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন সৌমিত্র খাঁ থেকে শুরু করে একাধিক বিজেপি নেতা। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির অনেকেই। সেই তালিকায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীও। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা স্বতন্ত্র ছিল না বলে যেমন আগেই মন্তব্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি ২৪-এর ভোটে দলের সংগঠন ‘ফেল’ করার বিষয়ে তাঁর কোনও ভূমিকাই ছিল না বলে দাবি করেন শুভেন্দু। এসবের মধ্যেই বুধবার শ্যামবাজারে আরজি কর ইস্যুতে ধরনা আন্দোলনের এক মঞ্চে পাশাপাশি দেখা যাবে বঙ্গ পদ্ম শিবিরের‌ প্রধান তিন মুখ সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপকে। দেখা যাবে ঐক্যের ছবি। কিন্তু এতো কিচুর পর প্রশ্ন একটাই, ‘দূরত্ব’ এই তিনজনের মধ্যে মিটবে কি না।প্রশ্ন আরও,  আরজি কর কাণ্ড কি পারবে সুকান্ত- শুভেন্দু- দিলীপদের একমত আর এক পথে ফেরাতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − two =