দেশকে এগিয়ে যেতে হলে বাংলার পুনর্জাগরণ দরকার: মোদি

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ৪২ আসনের মধ্যে ১৮ আসন পেয়েছিল বিজেপি। ২০২৪-এ এই বাংলা  থেকে ৩০ থেকে ৩৫ আসন চাইছে মোদি ব্রিগেড। বাংলায় এসে বঙ্গ বিজেপির জন্য টার্গেট ঠিক করে দিয়ে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিকে বিগত কয়েক সপ্তাহে দফায় দফায় বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। প্রথম সভা করেন কৃষ্ণনগরে। কৃষ্ণনগরে এবারে বিজেপির বাজি কৃষ্ণনগরের রানি মা অমৃতা রায়। নির্বাচনী প্রচারের সভা থেকে মোদিকে সুর চড়াতে দেখা গেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার ফের আরও একবার তোপ দাগলেন তৃণমূলকে। ফুঁসে উঠলেন বামেদের বিরুদ্ধেও। এদিন মোদি স্পষ্ট জানান, বর্তমানে তৃণমূলের জন্যই শেষ হয়ে যাচ্ছে বাংলা। তবে  দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে বাংলাকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। এদিন তিনি বলেন, ‘ভারতকে বিকশিত করতে হলে দেশের কিছু রাজ্যর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যে রাজ্যগুলির সবথেকে বেশি ক্ষমতা রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলা। ভারতের ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যাবে সামাজিক দিক থেকে উন্নতি বাংলার হাত ধরে হয়েছে। ভারতের বিপ্লবী আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনে পুরোভাগে দেখা গিয়েছে বাংলাকে।’ একইসঙ্গে তিনি এও জানান, ‘বিশ্বে ভারতের নাম ছড়ানোর পিছনেও বাংলার বড় হাত আছে। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাশাপাশি বিবেকানন্দ, জগদীশ চন্দ্র বসুর নাম করা যেতে পারে। কিন্তু এই বাংলার এই পরম্পরাকে আগে বামেরা এখন তৃণমূল শেষ করে দিয়েছে। দেশকে এগিয়ে যেতে হলে বাংলার পুনর্জাগরণ দরকার।’

এখানেই শেষ নয়, তোপ দাগেন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ওঠে পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতি নিয়েও। এই প্রসঙ্গে তৃণণূলকে বিদ্ধ করে বলেন, ‘বিজেপিকে যতই গালি দিক, নোটের তাড়া কোথায় লুকোবে? সকলের চোখের সামনে বেরিয়েছে। খাটের তলা থেকে নোট বেরিয়েছে। গোটা দেশে ঘৃণা তৈরি হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে পুরো শক্তি নিয়ে লড়াই করছে মোদি সরকার।’

এরই পাশাপাশি এদিন মোদির মুখে বারবার শোনা যায় নারী ক্ষমতায়নের কথা। বলেন, ‘ভারতের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা ভারতের উন্নতিতে যোগ দিলে দেশের উন্নতির পথ আরও সুগম হবে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য সবথেকে বেশি চেষ্টা করি। আমাদের দেশের মহিলাদের ক্ষমতা আছে দেশকে বদলানোর। গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ও আমি মহিলাদের গুরুত্ব দিতাম। আমূল কিংবা লিজ্জত পাপড় যে কোনও বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দেয়। দুটি সংস্থাই মহিলারা চালায়।’ এই প্রসঙ্গে মোদি এদিন এও বলেন, ‘এতদিন পর্যন্ত আমরা মনে করতাম, মহিলারা ছোটখাট কাজ করলেই তাদের ক্ষমতায়ন হয়ে যায়। আমি বলেছি না। সাইকোলজিক্যাল বাধা দূর করতে হবে। আমি এই জন্যই ড্রোন দিদির প্রকল্প নিয়েছি। গ্রামে যখন মানুষ দেখবে মহিলারা ড্রোন পাইলট, তাদের মহলাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে।‘

এরই পাশাপাশি উঠে আসে নারী সুরক্ষার কথাও। এটি বর্তমানে একটা বড় ইস্যু সে কথাও বারবার শোনা যায় মোদির মুখে। মুখ খোলেন বাংলার সন্দেশখালির নারী নির্যাতন নিয়ে। এদিকে সন্দেশখালিতে এবার প্রতিবাদী মুখ রেখা পাত্রকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। রেখা দেবীর সঙ্গে আগেই ফোনে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল মোদিকে। এদিন ফের একবার তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। সাফ বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলায় এক নারীর হাত ধরে যে অত্যাচার চলছে তার উত্তর নারী শক্তিই দেবে। একজন নারী মসনদে বসে থাকার পরেও বাংলার যা অবস্থা তাতে হতাশ মহিলারা। পুরুষরাও হতাশ। বাংলায় অনেক বড় পরিবর্তন হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।’

বাংলায় অনুপ্রবেশ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও এদিন সুর চড়াতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। মোদি বলেন, যে মমতা একসময় অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করে সংসদে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে কাগজ উড়িয়েছিলেন, সেই মমতাই আজ অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করছেন। নরেন্দ্র মোদির কথায়, ‘যে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মমতা সংসদে কাগজ উড়িয়ে তুফান তুলে ফেলেছিলেন, এখন তিনিই সেই অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করছেন। এখন তা সোনার থালার মতো। ওনার জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলিও ভোটব্যাঙ্ককে মাথায় রেখে। ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে সিন্দুক খোলেন উনি।’

তবে এতো কিছুর মাঝেও নরেন্দ্র মোদির ধারনা, বিশ্বের দরবারে বাংলা আবারও শ্রেষ্ঠ আসন নিতে পারে। কিন্তু তার জন্য বাংলাকে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি থেকে বের করে আনতে হবে। এই প্রসঙ্গে মোদি এও জানান, ‘ভারতকে বিকশিত করতে বাংলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। ভারতকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে বাংলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই মহান পরম্পরাকে প্রথমে লালেরা এবং এখন তৃণমূল তছনছ করে দিয়েছে। দেশকে এগোতে হলে বাংলার নতুন করে জাগরণ দরকার। তবে দুঃখের বিষয় বাংলায় ক্ষমতালোভীরা মসনদে। তারা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 1 =