দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজে ছাত্রীর গণধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা এবং তাঁর পরিপ্রেক্ষিতে দুই নেতার করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের অন্দরের মতবিরোধ একেবারে প্রকাশ্যে। ধর্ষণের এই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার এবং শনিবার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মদন মিত্র যে বিতর্কিত মন্তব্য করেন, তার সমালোচনা করে শনিবারই বিবৃতি দেয় তৃণমূল৷ দুই নেতার মন্তব্য তাঁদের ব্যক্তিগত মত বলেও জানিয়ে দেয় শাসক দল৷ তৃণমূলের এই বিবৃতির সূত্র ধরেই কল্যাণ এবং মদনকে নাম না করে নারী বিদ্বেষী বলে খোঁচা দেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও৷
এরপর দলের এই বিবৃতির বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ আর চেপে রাখতে পারেননি সাংসদ কল্যাণ। এই বিবৃতি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এক্স হ্যান্ডেলে পাল্টা পোস্ট করে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দলের মতের সঙ্গে তিনি সহমত নন। ওর পাশাপাশি আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনেন তৃণমূলের অন্যতম সিনিয়র এই সাংসদ। কল্যাণ অভিযোগ করেন, এই বিবৃতি দিয়ে আসলে দল প্রকৃত অপরাধীদের যাঁরা আড়াল করছেন, আর এই সমস্ত নেতাদেরই সমর্থন করছে দল। ২০১১ সালের পর যাঁরা দলে এসেছেন, সেই নেতাদের একাংশকেও সরাসরি এই ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী করেন তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান সাংসদ। এরপর এক্স হ্যান্ডেলে দলকে ট্যাগ করে তৃণমূল সাংসদ লেখেন, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যে পোস্ট করা হয়েছে, ‘আমি তার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছি৷ যে নেতারা আসল অপরাধীদের আড়াল করছে তাঁদেরকেই কি তারা (তৃণমূল কংগ্রেস) সমর্থন করছে? এই ধরনের ঘটনার জন্য যে নেতারা দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু খাতায় কলমে বিবৃতি দিলে কোনও পরিবর্তন আসবে না৷ আরও দুর্ভাগ্যজনক হল ২০১১ সালের পর দলে আসা কিছু নেতাই এই ধরনের ঘটনার পর প্রশ্নের মুখে৷ এই ধরনের অপরাধীদের যাঁরা আড়াল করছেন আমি তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছি৷ আমি যে কথাগুলি বলেছি, তার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী তা বোঝার জন্য ন্যূনতম মেধা এবং নৈতিকতা প্রয়োজন৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে যা দেখা যাচ্ছে না৷’ আর এই মন্তব্যের জেরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে শাসকদলের অন্দরে। প্রসঙ্গত, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার এও বলেছিলেন, ‘বন্ধু যদি বান্ধবীকে ধর্ষণ করে তাহলে পুলিশ কীভাবে নিরাপত্তা দেবে? কলেজের ভিতরেও কি পুলিশ রেখে দেওয়া সম্ভব?’
শ্রীরামপুরের সাংসদের এই মন্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার আবার বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, ‘ওই ছাত্রী যদি ওখানে না যেতেন তাহলেই আর কিছু ঘটত না।’ কল্যাণ এবং মদনের মন্তব্যকে অস্ত্র করে নতুন করে শাসক দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায় বিরোধীরা। এরপরই শনিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানানো হয়, ‘দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজে যে ঘৃন্য ঘটনা ঘটেছে, সেই প্রসঙ্গে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মদন মিত্রের মন্তব্য সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যক্তিগত মত। এই ধরনের মন্তব্য থেকে দল সম্পূর্ণ ভাবে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করছে এবং তার নিন্দা করছে। এই ধরনের মন্তব্য কোনওভাবেই দলের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। আমাদের দৃঢ় অবস্থানই বজায় থাকছে। মহিলাদের উপরে অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি এবং এই ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের কঠোর শাস্তি দাবি জানায় দল।’ তবে কসবার এই ঘটনায় কল্যাণের এই বিবৃতি যেভাবে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও পদক্ষেপ করে কি না, সেটাই এখন দেখার।