সামনেই রামনবমী। আর এই রামনবমীতে বঙ্গ বিজেপির দুই স্তম্ভ শুভেন্দু আর দিলীপ ঘোষের কাছে আমন্ত্রণ আসছে বানের জলের মতো। দিন যত এগোচ্ছে বিরোধী দলনেতার কাছে রামনবমীতে আমন্ত্রণের তালিকা ততই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তবে রামনবমী পালনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুর শুভেন্দুর কাছে ‘পাখির চোখ’। তাই শেষ মুহূর্তে কর্মসূচিতে কোনও বদল না ঘটলে আগামী রবিবার ভবানীপুরে বিধানসভা এলাকায় শুভেন্দু যাবেন বলেই ধরে নিচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি নেতৃত্ব। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, ভবানীপুর ছাড়াও নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামেও রামনবমীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন শুভেন্দু।
এদিকে বিজেপির পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, রামনবমীতে রাজ্যের সব জেলাকেই ছুঁয়ে যেতে চান বিরোধী দলনেতা। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, পাহাড় থেকে সাগর, সর্বত্রই রামনবমীর অনুষ্ঠানে শামিল হতে চান তিনি। তাই ৫ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে ধাপে ধাপে রাজ্যের সব জেলায় গিয়েই রামনবমী পালন করার চেষ্টা করবেন শুভেন্দু। তবে কবে কখন কোথায় যাবেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনিই।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, রামনবমীতে পাঁচ দিনের কর্মসূচি করে রাজ্যের সব জেলাকে ছুঁয়ে যাওয়ার পিছনে শুভেন্দুর রাজনৈতিক অঙ্কও রয়েছে। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে শুভেন্দু এক দিকে যেমন হিন্দু ভোটারদের কাছে পৌঁছোতে চাইছেন, তেমনই বাংলায় সামগ্রিক ভাবে ‘হিন্দুত্বের আবহ’ও তৈরি করতে চাইছেন। আর শুভেন্দুর কথাবার্তায় এটাও স্পষ্ট যে, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে তিনি যে কট্টর হিন্দুত্বের লাইন নিয়ে এগোবেন। এ বছরের রামনবমীর মঞ্চকে সেই কারণেও ব্যবহার করতে চান বিরোধী দলনেতা। যদিও রামনবমীতে তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে প্রকাশ্যে শুভেন্দু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার দফতর সূত্রের দাবি, রামনবমীর অনুষ্ঠানে যাওয়ার আবেদন ওই দফতরেই জমা পড়েছে হাজারের উপর। এর পরে কাঁথিতে তাঁর বাসভবন শান্তিকুঞ্জ, নন্দীগ্রামের বিধায়ক কার্যালয়, হলদিয়ার অফিসেও যে পরিমাণ রামনবমীর আমন্ত্রণ জমা পড়েছে, তাতে দুশ্চিন্তায় শুভেন্দুর দফতর। বিজেপি পরিষদীয় দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যে ভাবে নন্দীগ্রামের বিধায়কের নামে রামনবমীতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র এসেছে, তা তাঁর পক্ষে সামাল দেওয়া দুষ্কর। তবে সূত্রে খবর মিলছে, ভবানীপুরের পাশাপাশি বাকি সময়ে রাজ্যে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছিটিয়ে রামনবমী উৎসব পালন করবেন তিনি। যে সব জায়গায় তাঁর যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ইতিমধ্যেই সেই সব এলাকায় মৌখিক বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই বিজেপি সূত্রে খবর।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, সম্প্রতি ভবানীপুর বিধানসভার ‘সক্রিয়’ সদস্যদের নিয়ে নিজাম প্যালেসে একটি বৈঠক করেছেন শুভেন্দু। সেখানেই তিনি জানিয়েছিলেন, আগামী দিনে ভবানীপুরে নিজের ‘কর্মকাণ্ড’ বৃদ্ধি করবেন। সেই কথামতোই বিরোধী দলনেতা ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুনেছিলেন ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়ির ছাদে বসে। দোলের আগের দিন সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও শুভেন্দু ভবানীপুরে গিয়েছিলেন। এ বার তিনি রামনবমী পালন করতে চান ভবানীপুরে। ভবানীপুর বিধানসভার বিজেপির নেতা-কর্মীদের রামনবমী আয়োজন করতে তেমনই নির্দেশ দেন তিনি।