পঞ্চায়েত ভোটে রাজনৈতিক হিংসার হানাহানিতে উত্তপ্ত বিষ্ণুপুর। বিষ্ণুপুরের দড়ি কেওড়াডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০৯ নম্বর বুথে বিজেপির গ্রামসভার প্রার্থী হয়েছিলেন ভোলানাথ মণ্ডল। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, কেন তিনি বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন তা নিয়ে ভোটের তিনদিন আগে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর ওপর হামলা চালায়। স্থানীয় বাসিন্দারা যতক্ষণে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন, ততক্ষণে মারধরের জেরে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছায়। এরপরই তাঁকে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করার প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরিবারের দাবি, ভোলানাথ মণ্ডলের তলপেটে, বুকে বারংবার লাথি মারা হয়। এবং বন্দুকের বাট দিয়ে চোখে আঘাতও করা হয়। একইসঙ্গে ভোলানাথের পরিবারের তরফ থেকে এও দাবি করা হয় যে, তাঁর ইউএসজি রিপোর্ট খুব খারাপ আসে। এরপরই ভোট কেটে যাওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার সকালে হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকের অভিযোগ সেই মারধরের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে
দোষীদের শাস্তির দাবি জানান ভোলানাথের পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, প্রাক্তন পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী দিলীপ নস্কর এবং তাঁর অনুগামীরা মারধর করেছেন ভোলানাথ মণ্ডলকে। এই ঘটনায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পলাশ কর্মকার জানান, ‘মৃত্যুটা দুঃখের। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা দায়ী, সেটা সত্য নয়। একটা মৃত্যু হলেই রাজনৈতিক ইস্যু করবে, সেটা কখনই কাম্য নয়। রাজনৈতিকভাবে লড়াই চলতেই পারে। কিন্তু তা বলে খুন, এটা কখনই তৃণমূল করতে পারে না।’
এদিকে শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঘটে যায় আরও এক মর্মান্তিক ঘটনা। তৃণমূলের বিজয় মিছিলে, ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হয় মায়ের। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিষ্ণুপুরে তৃণমূলের বিজয় মিছিলে ‘আদি ও নব্য’র সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন অলকা রুইদাস নামে এক মহিলা। পরিবারের কথায়, বিজয় মিছিলে আবির ছোড়াকে কেন্দ্র করে বচসা শুরু হয় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। সেখানে ছেলেকে বাঁচাতে ছুটে যান তাঁর মা অলকা। সেইসময় অলকাকে ধাক্কা দেওয়া হয়। রাস্তায় পড়ে যান তিনি। অভিযোগ, সেই ধাক্কার ফলেই পড়ে মৃত্যু হয় অলকার। তৃণমূল কর্মী পঞ্চানন রুইদাস ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছে অলকার পরিবার। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করছেন পঞ্চানন রুইদাস। তাঁর দাবি, ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে দক্ষিণবঙ্গ যখন একের পর এক ঘটনায় উত্তপ্ত ঠিক তখনই উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদ্ধ করে হুঙ্কার ছাড়তে দেখা গেল বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্য রবিশঙ্কর প্রসাদকে। তিনি জানান, বামেদের শাসনের চেয়েও খারাপ শাসন চলছে তৃণমূলের আমলে। এই চিত্র সারা দেশের সামনে তুলে ধরা হবে। সঙ্গে রবিশঙ্কর প্রসাদের হুঁশিয়ারি, ‘শুধু বাংলায় নয়, গোটা দেশের সামনে মমতাজীর বাংলার এ দৃশ্যের কথা তুলে ধরব।’ পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বিহারে বিজেপি নেতাকর্মীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা করেন। এদিন তিনি বলেন, ‘বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আর বিহারে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মারধর করছেন। কোচবিহার থেকে এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউ কোচবিহার ষ্টেশনে নামেন বিজেপির ৪ সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি পৌঁছান নিউ কোচবিহারে। এদিন কোচবিহারের এক বেসরকারি হোটেলে আক্রান্ত বিজেপির নেতা কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন। এরপর কোচবিহারের এক বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে জখম ব্যাক্তিদের সাথে দেখা করেন তাঁদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।