পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরম কটাক্ষ করতে দেখা গেল বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংকে। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে বৃহস্পতিবার প্রথম শ্রেণির এক দৈনিক খবরের কাগজে প্রথম পাতায় বড় বড় বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে জানান, রাজ্যের শাসকদলের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে ‘স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষা, বাংলা মানেই ভরসা।’ আর এই প্রসঙ্গেই বিজেপি নেতা জানান, ‘এই দাবির পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একসময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড, শিক্ষা ও শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী, বর্তমানে দুর্নীতি ও চাকরি বিক্রির অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার জেলবন্দি খোদ পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর কোনো আস্থা রাখছেন না। তিনি রাজ্যের প্রথম সারির মাল্টি সুপার স্পেশালিটি সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমের চিকিৎসায় ভরসা রাখতে না পেরে অন্য এক বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তৃণমূলের কামারহাটির বিধায়ক ও একসময় তৃণমূলের ১১ মাস জেলবন্দি মন্ত্রী মদন মিত্র সিবিআই তলবে সাড়া না দিয়ে কথায় কথায় প্যানিক অ্যাটাকের নামে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের ভাইপো বর্তমান তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ও সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সরকারের একমাত্র মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি নিজের চোখের চিকিৎসার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আস্থা না রেখে বার বার বিদেশ ছুটছেন। কখনও আমেরিকা আবার কখনো সিঙ্গাপুর ছুটেছেন।’
এরই পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছেন সম্প্রতি গুলেন বেরি সিন্ড্রোমে ব্যারাকপুর লোকসভার অন্তর্গত জগদ্দলের এক কিশোরের বি সি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্যুর কথাও। আর এখানেই বিজেপির প্রাক্তন সাংসদরে বক্তব্য, ‘রাজ্যে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের নামে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হলেও সেখানে না আছে ডাক্তার না আছে ভালো চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্যালাইন কান্ড, আরজি কর হাসপাতালে নির্মম হত্যার মত ঘটে চলা অসংখ্য ঘটনা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কদর্য হাল জনগণের সামনে বার করে দিয়েছে।’ আর এই সব প্রসঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন এই হল তৃণমূলের আমলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল।
পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রকে তৃণমূল পুরো দুর্নীতির আখড়া করে তুলেছে বলেও মনে করেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে বাচ্চাদের মুখের খাবার মিড ডে মিল – সর্ব ক্ষেত্রে তৃণমূল দুর্নীতির কালো থাবা বসিয়েছে। একাধিক সরকারি বিদ্যালয় পরিকাঠামো ও শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। একাধিক স্কুলে শিক্ষার্থীর অভাবে এইবার মাধ্যমিকের সিট পর্যন্ত পড়ছে না। শহরের কাছে তো আগেই আস্থা হারিয়েছে, এমনকি গ্রাম অঞ্চলের মানুষের সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আর ভরসা করছেন না। যাদের সামান্য সামর্থ আছে তারাই নিজের বাড়ির বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে না পাঠিয়ে বেসরকারি স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। এইভাবেই সরকার প্রকারান্তরে শিক্ষাকে বেসরকারিকরণ করে দিচ্ছে দিনের পর দিন।’
সঙ্গে এও উল্লেখ করেন, ‘রাজ্যে চাকরি নেই। দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এসএসসি ও প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা। নামমাত্র কয়েকটি চাকরি বা চুক্তি ভিত্তিক কাজের বিজ্ঞাপন যদিওবা বের হয়, তবে সেই পদ গুলি তৃণমূলের পার্টির নেতারা টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের কাছে বিক্রি করে দেয়। তাই রাজ্যের যুব সম্প্রদায় উচ্চ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলস্বরূপ রাজ্যের অধিকাংশ কলেজে সব সিট ভর্তি হচ্ছে না। ঠিকে চাকরির জন্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, ঠিক তেমনই উচ্চশিক্ষার জন্যে ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছেন মেধাবী পড়ুয়ারা।’
এই সব ঘটনার রেশ টেনে অর্জুন সিং জাননান, প্রথম শ্রেণির দৈনিককে হাতিয়ার করে তৃণমূল সরকার যতই বিজ্ঞাপনে বড় বড় মিথ্যা কথা বলে মন ভরাতে চাক, রাজ্যের মানুষ তাদের দৈনন্দিনের অভিজ্ঞতায় তৃণমূলের এই মিথ্যাচার বুঝে গেছে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই সরকারকে পরিত্যাগ করে বাংলায় পদ্মফুল ফোটানো। সত্যি দরকার পরিবর্তন।