পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন এত হিংসা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্য রবিশঙ্কর প্রসাদ

পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্ব মোটের ওপর মিটল। কোনও আশ্চর্যজনক কিছু না ঘটলে, এখনও পর্যন্ত তা হালচাল, তাতে সব জেলা পরিষদ দখলের পথে তৃণমূল, বিরোধীশূন্য অন্তত তিন জেলা। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে ব্যাপক হারে সবুজ ঝড়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনই আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্লট একপ্রকার তৈরি করল। চব্বিশকে লক্ষ্য করেই এগোচ্ছে শাসক শিবির ও যুযুধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। চব্বিশকে লক্ষ্য রেখেই অ-বিজেপি জোট তৈরি করতে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে ব্যাপারে বেশ কয়েক পদক্ষেপ এগিয়েওছেন তিনি। নবান্নে বৈঠক সেরেছেন। কিন্তু বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে এত হিংসার কারণ অনুসন্ধানে বাংলায় এসে এবার অ-বিজেপি দলগুলির দিকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ।

প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে লাগাতার হিংসার অভিযোগ উঠছে। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পঞ্চায়েত ভোটের ফলপ্রকাশ চলাকালীন রাজ্যে এসেছে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের নেতৃত্বের তিন সদস্যের এই দল যাবে বাংলার বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে। হিংসা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করবেন। সেই রিপোর্ট পৌঁছে যাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। যে এলাকাগুলি থেকে খুনের অভিযোগ এসেছে বা লাগাতার বোমাবাজি, গুলি চালনার মতো ঘটনা ঘটেছে, সেই সমস্ত এলাকা পরিদর্শন করে, নিগৃহীতদের সঙ্গে কথা বলবেন এই টিমের সদস্যরা। বুধবার বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘আমি তো বিহার থেকে, সত্যপাল তো উত্তর প্রদেশ থেকে। এত হিংসা তো আমাদের আমলে বিহার-উত্তরপ্রদেশে হত, এখন তো হয় না। কেন বাংলাতে এত হিংসা? কেন এত খুনোখুনি? বাংলায় গণতন্ত্র লজ্জিত।’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘আমি তো শুনেছি, এখানে জয়ী প্রার্থী বসিয়ে রেখে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। না হলে বলা হয়েছে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না।’ এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে রবিশঙ্কর প্রসাদ এও বলেন,  ‘আমি তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন লড়াকু রাজনৈতিক নেতা হিসাবে সম্মান করি, সে যতই আমাদের মতাদর্শের তফাৎ থাকুক না কেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তো সব প্রশ্নের রেডিমেড উত্তর থাকে। তবে নির্বাচনের পর তাঁকে কেন সামাজিক মাধ্যমে এসে পোস্ট করতে হল? কেন সাংবাদিকদের চোখাচোখি হতে পারলেন না?’

২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠার পরই বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম গঠন করেন। এই টিমে রবিশঙ্কর প্রসাদ ছাড়াও রয়েছেন রেখা বর্মা, রাজদীপ রায় ও সত্যপাল সিং। সূত্রে খবর, একদিন কলকাতায় থেকে এরপই রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে স্পর্শকাতর বুথগুলিতে যাবেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত যা কর্মসূচি নির্ধারিত হয়েছে, তাতে প্রথমেই তাঁরা উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে যাবেন। বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম উত্তরবঙ্গেও যাবে বলে জানা গিয়েছে।

কেবলমাত্র ভোটের দিন নয়, গণনাকে কেন্দ্র করেও যে বেলাগাম হিংসা-হানাহানির অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে সরব বিরোধীরা। এমনকি জয়ের পরও বিরোধীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। একটা নির্বাচন ঘিরে এত রক্ত ছড়িয়েছে, এত লোকের মৃত্যু হয়েছে। এত গুলি, এত বোমাবাজি কি গণতন্ত্রে চলে?’    এরই সূত্র ধরে বাংলার নির্বাচনের হিংসার ক্ষেত্রেও টেনে আনেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকেও। কারণ, এর আগে রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ ইস্যুতে বিজেপি-বিরোধী শক্তিকেই ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে রবিশংকর প্রসাদ এই বিরোধী জোটেক কটাক্ষ করে বলেন, ‘বাংলায় যা হিংসা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের লজ্জা।’ রাহুল এবং সীতারাম ইয়েচুরির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান, ‘রাহুলজি, সীতারামজি আপনাদের কর্মীদের তো মারছে, ‌ আপনারা কিছু বলবেন না?’  এই প্রসঙ্গে রবিশঙ্কর প্রসাদ এও বলেন,  ‘৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাও চুপ আপনারা?’এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই হিংসা দেখে সরব হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জনও। ঠিক সেই সুরেই সুর মিলিয়ে এদিন রবিশঙ্করও প্রশ্ন তোলেন, ‘এই সব না করে মমতাজি আপনি কটা আসন পেতেন?’ তাঁর সংযোজন, ‘গোটা নির্বাচনে লজ্জা হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এই বাংলার কী হাল করেছেন মমতাজি?’ সঙ্গে এ প্রশ্ন তুলে রবিশঙ্কর জানতে চান,  ‘এত লাভ হয়েছে যখন, তখন কেন এত মারা ,ব্যালটবাক্স ফেলার দরকার কী ছিল? কেন ব্যালট পেপার ছিনতাই করার দরকার ছিল?’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − eight =