বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কলমে ঋদ্ধ বাঙালির চিন্তন ও মনন

বহু বিপর্যয়ের দিনেও দৃপ্তকণ্ঠেই কথা বলতে দেখা গেছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সেই আশার কাণ্ডারীর হাতে কলমও যেন ছিল পরশপাথর। রাজনীতির আবর্তে থেকেও সাহিত্যচর্চা থামেনি তাঁর। মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়িত্বের আড়ালে বিস্মৃত হয়নি তাঁর লেখক-সত্তা। শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের এই প্রাক্তনীর জীবন রাজনীতির পাশাপাশি গাঁটছড়া বেঁধেছিল সাহিত্যের সঙ্গেও৷

বিশ্বসাহিত্যের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ছিলেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম প্রিয় সাহিত্যিক৷ তাঁর ‘দ্য স্টোরি অব এ শিপরেকড সেলর’ বুদ্ধদেবের অনুবাদে হয়েছিল ‘বিপন্ন জাহাজের এক নাবিকের গল্প’৷ চিলের সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে মার্কেজ-সৃষ্টি ‘ক্ল্যান্ডেস্টাইন ইন চিলে’ তাঁর কলমে নতুন রূপে ধরা দেয় ‘চিলিতে গোপন’ হয়ে৷ বাংলা অনুবাদ সাহিত্যে উদ্ভাসিত হয়ে থাকবে তাঁর কলমে ‘এই আমি মায়াকভস্কি’৷ সোভিয়েত কবি ভ্লাদিমির মায়াকভস্কির রচনাকে বাঙালি পাঠকের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার প্রয়াস নিয়েছিলেন তিনি। কাফকার ‘মেটামরফোসিস’ তাঁর কলমে রূপান্তরিত হয়েছিল নাটক ‘পোকা’-য়৷ নন ফিকশন ‘পুড়ে যায় জীবন নশ্বর’ তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য ছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করেই।

অনুবাদ সাহিত্যের পাশাপাশি তাঁর নিজের রচনাও উল্লেখযোগ্য। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতজুড়ে উত্তাল সময় ধরা পড়েছিল তাঁর লেখা নাটক ‘দুঃসময়’-এ। পাঠকের চিন্তনকে শানিত করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর লেখা ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা’ এবং অনুবাদ সাহিত্য ‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু’৷ এড়িয়ে যাননি ক্ষমতার অলিন্দে তাঁর যাপনকালকেও৷ বাংলায় বাম শাসন সম্বন্ধে বিদগ্ধ, গবেষক এবং সমালোচকদের চিন্তার উপজীব্য হয়েছে তাঁর অনূদিত ‘ফিরে দেখা’৷ পাঠকের সংগ্রহে অমলিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ‘দুটি নাটক’, ‘রচনাপ্রবাহ’, ‘তিন মায়ের কথা’ এবং বিদেশি নাটকের অনুবাদ ‘চেনা ফুলের গন্ধ’৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 7 =