মহাষষ্ঠী। দেবী দুর্গার বোধন। তবে এবারের পুজো কিছুটা আলাদা। উৎসবের আবহে চলছে আন্দোলন। চিকিৎসকরা নেমেছেন পথে। চলছে অনশন। শোকে-দ্রোহে-আনন্দের মধ্যেই বাংলা আপন করে নিয়েছে এবারের শারদোৎসবকে। এককথায় বলতে গেলে শোকের মধ্যেই চলছে উৎসব। এদিকে এমনই এক অদভুত আবহে অসুর বানিয়ে তাক লাগালেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুর এক শিল্পী। ইতিমধ্যেই সেই অসুরের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কারণ, যাঁরা এই অসুর দেখেছেন তাঁদের অনেকেরই অসুরের মুখ দেখে প্রথমেই মাথায় এসেছে আরজি কর কাণ্ডে সবথেকে আলোচিত ব্যক্তিত্ব সন্দীপ ঘোষের কথাই।
তবে ষষ্ঠীর সকাল থেকেই পুজো পরিক্রমা শুরু হয়েছে শহরবাসীর। বেলা বাড়তে বেড়েছে ভিড়। কারণ, শহরের উপকণ্ঠের মানুষের ধীরে ধীরে পা রেখেছেন পুজোর স্বাদ নিতে এই কলকাতা শহরে। শুধু পুজো মণ্ডপই নয়, বুধবার অনশন মঞ্চের সামনেও নজরে আসে দর্শনার্থীদের ভিড়। সেখানে চোখে জল নিয়ে মায়েরা হাজির হয়েছেন সন্তানসম চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়াতে।
যাঁরা এই অনশন মঞ্চের সামনে এসেছেন তাঁরাও স্পষ্ট ভাবে জানান, ‘এমন ঘটনা তো আগে কখনও দেখিনি। বিচার চেয়ে তাই আমিও পাশে দাঁড়াতে এসেছি।’ সঙ্গে এও জানান, ‘এই মঞ্চে যাঁরা আছেন, তাঁরা আমার ছেলেমেয়ের বয়সী। ওদের জন্য আমার ভয় করছে।’
তবে ষষ্ঠীর দিনে যে ভিড় দেখেছে কলকাতা গত কয়েক বছরে সেই ভিড় কিন্তু ছিল না এদিন। মানুষের ঢল যে নামবে তার মালুম পাওয়া গেছে কলকাতা মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে পা রাখতে। বিশেষত দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে ভিড় ছিল সাংঘাতিক। যাঁদের কার্ড নেই তাঁদের টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় দীর্ঘক্ষণ। এদিনের দুপুর মেট্রোর দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের এই ছবি আঁচ দিয়েছে কেমন হতে চলেছে কলকাতার পুজো। তবে এবারের পুজোর ষষ্ঠীর দিনে ভিড় বলতে যা বোঝায় তার অধিকাংশই যুবাদের। প্রবীণরা সেভাবে পথে নামেননি। এর বড় একটা কারণ নিঃসন্দেহে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। রোদ্দুর না থাকলেও আর্দ্রতায় মানুষ কাহিল করেছে সহজেই। ফলে দিনে ভিড় না হলেও সন্ধে হতে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে কলকাতায়।
এরই মধ্যে নজরকাড়া ভিড় ছিল নেতাজির পুজো বাগবাজার সর্বজনীনে। ষষ্ঠীর সকাল থেকেই ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন চেতলা অগ্রণীতেও। ঠিক তেমনই জনস্রোত সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয়। তবে যে থিম করেছে সন্তোষ মিত্র তা দেখতে হলে যেতে হবে রাতেই। ফলে দিন আর রাতের মধ্যে বিশাল ফারাক ধরা পড়ছে এই সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয়।
তবে শুধু শহর কলকাতাই বা বলি কেন, ভিড় হচ্ছে ব্যারাকপুর পুর্ব-তালবাগান সার্বজনীন দুর্গাপুজোর মণ্ডপেও। যাদের থিমে তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বজুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ভয়াবহতাকে। তারই বার্তা দিতে মানুষকে সচেতন করে তারই বার্তা দিতে পুজোর উদ্যোগক্তাদের এই মণ্ডপ ভাবনা। মণ্ডপজুড়ে গাছ লাগানো, দুষণ রোধ, জলাশয় ভরাট বন্ধর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে জলবায়ু ঠিক রাখতে পরিবেশের ভারসাম্য রাখতে নানা তথ্য ও তুলে ধরা হয়েছে।