হাওড়ার মতো দশা হতে পারে কলকাতারও, আশঙ্কা কলকাতা পুরসভার কর্তাদের একাংশের

বাড়িতে ধরেছে ফাটল। রাস্তা ফেটেছে। এখন এই অবস্থা হাওড়ার বেলগাছিয়ার। সেখানে পরপর তিনদিন ধস নেমেছে। যার জেরে রাস্তায় প্রচুর মানুষ। বুঝতে পারছেন না এখন কী করবেন বা কোথায়ই বা যাবেন। কপালে ভাঁজ সকলের। তবে এই অবস্থা হতে পারে কি কলকাতারও! আবর্জনার পাহাড়েও একই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেল কলকাতা পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্তাদের।

কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, সম্প্রতি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তরফে বিভাগীয় মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার এবং পুরসভার কমিশনারকে এ ব্যাপারে সবিস্তারে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে,বর্তমানে কলকাতা পুরসভার ৪০ একর জমিতে দৈনিক আবর্জনা পড়ে। মোট ৬০ একর জমিতে মূলত আবর্জনা ফেলা হয়। ২০ একর জমি থেকে আবর্জনা তুলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়েছে ওই জমি ফাঁকা করা হয়েছে। কিন্তু আবর্জনা ফেলার চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে ফাঁকা জমি কতটা রাখা সম্ভব হবে, সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় কলকাতা পুরসভা।

কলকাতা পুরসভার এলাকার আবর্জনা পড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু তিলোত্তমার উপর চাপ বাড়িয়েছে বিধাননগর,নবদিগন্ত-কলকাতা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা,এমনকী পানিহাটিও। জঞ্জাল ফেলার পরিকাঠামো না তৈরি হওয়ায় এই এলাকাগুলির যাবতীয় আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে কলকাতা পৌরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। যার পরিমাণ দৈনিক প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন।

এর পাশাপাশি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রের খবর, গরম পড়লেই আতঙ্ক এবং চিন্তা দুইই বৃদ্ধি পায় কলকাতা পুরসভার। কারণ আবর্জনার জমতে জমতে বর্তমানে ৪০ একর জমিতে প্রায় ৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন আবর্জনা জমে রয়েছে। এই আবর্জনার জমে জমে ভূ-গর্ভে ব্যাপক পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। নিত্যদিন আবর্জনার পাহাড় থেকে আগুন বেরতে দেখা যাচ্ছে। এমনকী বেশ কয়েকটি জায়গায় ধস নেমেছে। আর এখানেই বিভাগীয় আধিকারিকদের আশঙ্কা, আবর্জনার পাহাড় যদি খালি না করা যায় তাহলে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বড়সড় ধস বা বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। রিপোর্টে গোটা বিষয়টি সব ইস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

এখানেই শেষ নয়, রিপোর্টে এও বলা হয়েছে,পুরনো আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় নতুন আবর্জনার তার উপরে পড়ায় ভূ-গর্ভে তার প্রভাব পড়ছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আশপাশের অংশ এবং পরিবেশ রীতিমতো তপ্ত হয়ে উঠছে। বাতাসের গরম অবস্থা এবং ভূ-গর্ভ থেকে গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কোনও ভাবেই বিপর্যয় আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।

এর পাশাপাশি কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে,বর্তমানে জঞ্জাল পৃথকীকরণ এবং কম্প্যাক্টর বসিয়ে আবর্জনা সংকুচিত করার কাজ করা হলেও,আবর্জনার চাপ কোনওভাবেই কমেনি। অন্যান্য পুরসভা বা কেএমডিএ এলাকার চাপ পুরসভাকি নিজের ঘাড়ের উপর বইতে হচ্ছে।

মেয়র পারিষদ,কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ মলয় মজুমদার এই প্রসঙ্গে জানান, ‘গরমের সময় আমাদের জল দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে যাতে আগুন না লাগে। মিথেন গ্যাস বেরলে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এটা নিয়ে সমস্যা হয় না। আমার অনুমান হাওড়ার মতো সম্ভাবনা কলকাতার ক্ষেত্রে নেই। যেখানে ময়লা ফেলি, তার থেকে গ্রামগুলি দূরে অবস্থিত। কলকাতার ময়লার বড় অংশ রিপ্রসেসিং হয়।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + four =