পার্কিং লট টেন্ডার না করতে পারলে কলকাতা পুরসভার কোষাগারের ক্ষতি হবে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মেয়র। আর তা যে সত্যি তা সামনে এল শনিবার কলকাতা পুরসভার ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করার পরই। দেখা গেল গত ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল, তার থেকে ৬৭০ কোটি টাকা কম হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিভাগ রাজস্ব আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে এই বিপুল পরিমাণ টাকা মোট রাজস্ব আদায়ের কম আদায় হওয়ার পিছনে রয়েছে বলে স্বীকার করে নেন মেয়র। এই বিভাগ গুলোর মধ্যে অন্যতম পার্কিং বিভাগ। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পার্কিং বিভাগের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ২০.৯১ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন বিভাগের কারণে যে রাজস্ব আদায়ের ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পার্কিং বিভাগ। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, মেয়র চেয়েছিলেন, কোষাগারে রাজস্ব আদাই যথোপযুক্ত রাখতে, পার্কিং লটের টেন্ডার চালু হোক। কিন্তু দল করতে দেয়নি। যে কারণে ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষের রাজস্ব আদায় ধাক্কা খেল।
প্রসঙ্গত, এই পার্কিং টেন্ডার নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি শাসক দলের অন্দরে। কলকাতার রাস্তায় গাড়ির পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। গত ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত পার্কিং ফি চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল পুরসভা। নতুন হারে পার্কিংয়ের খরচ আড়াই গুণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে ঘিরেই তৃণমূল অন্দরেই মতানৈক্য সামনে চলে আসে। এই সিদ্ধান্তের পরেই দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলীয় সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতানৈক্য দেখা দেয় মেয়রের। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর ওই ফি বৃদ্ধিতে কোনও অনুমোদন নেই। এই ঘটনায় অসন্তুষ্ট হন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বক্তব্য ছিল, বিষয়টি প্রশাসনিক। তাই সেক্ষেত্রে দলের মুখপাত্র কেন মুখ খুলবেন তা নিয়েই। তারপরই তৃণমূলের তরফে থেকে একটি টুইট করা হয়। তাতে বলা ছিল, পার্কিং ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য কলকাতা পুরনিগমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে তৃণমূল। কিন্তু তাতেও সমস্যা। কারণ ফিরহাদ হাকিম জানান, তাঁর কাছে তখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কোনও নির্দেশ আসেনি। তা নিয়ে চলে টানাপোড়েন। তার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন ববি।
এমনকি একই জিনিস দেখা গেল, বিজ্ঞাপন বিভাগের ক্ষেত্রেও। গত অর্থ বর্ষে ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ১৯ কোটি টাকা। কারণ আজ পর্যন্ত বিজ্ঞাপন বিভাগ শহরে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং বোড সংক্রান্ত পলিসি তৈরি করতে পারল না। বেআইনি হোডিং বোর্ড ছয়লাপ শহরে। আর তার জেরেই ধাক্কা খাচ্ছে পুরসভার কোষাগার।