বিধাননগরে বেআইনি হোর্ডিংয়ের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এদিকে বাস্তবে ছবিটা বড়ই উল্টো। সরকারি নথি বলছে, বছরে ২০ লাখও আয় নেই। আর এই তথ্যকে সামনে রেখেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাকারীর দাবি, পুরনিগমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৩০টি হোর্ডিং সরকারি ভাবে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে এমন হোর্ডিংয়ের সংখ্যা অন্তত ৭৫০। এই বিপুল পরিমাণ ‘বাড়তি’ হোর্ডিং কারা লাগিয়েছে, কার অনুমতিতে, কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে, এর বিস্তারিত তদন্ত দাবি করা হয়েছে মামলায়। একইসঙ্গে এও অভিযোগ করা হয়েছে, ব্যাপক হারে এই বেআইনি হোর্ডিং লাগানোর জেরে শহরে দৃশ্যদূষণও হচ্ছে। পাশাপাশি, এই বেআইনি হোর্ডিংয়ের দায় প্রশাসনের না থাকায় মুম্বইয়ের মতো হোর্ডিংয়ের কাঠামো ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটলে কী হবে, তোলা হয়েছে সে প্রশ্নও।
বাস্তবিক ক্ষেত্রে ভিআইপি রোডের গোলাঘাটা থেকে কৈখালি পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তার ধারে নজরে আসে দেদার হোর্ডিং। এই এলাকা পড়ে বিধাননগর পুর-এলাকায়। করুণাময়ী, সিটি সেন্টার থেকে লেক টাউন সর্বত্র ঢাউস হোর্ডিংয়ে মুখ ঢেকেছে আকাশ। মামলাকারী আইনজীবী দিবায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ পুরনিগমের বোর্ড মিটিংয়ের নথিতে দেখা যাচ্ছে, হোর্ডিং বাবদ পুরনিগমের আয় ২০ লক্ষ টাকার মতো। অথচ বাস্তবে অন্তত ৭৫০ বড় বড় হোর্ডিং শহরজুড়ে রয়েছে। যার বাজারমূল্য অন্তত ৩০ কোটি টাকা। এখন পুরনিগম বলছে, নতুন করে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। এর আগে এই নিয়ে পুরসভার কাছে আরটিআই করে তথ্য চেয়ে মেলেনি। রাজ্য ও জাতীয় তথ্য কমিশনে আবেদনেও ফল হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এই মামলা।’ বেআইনি বিষয়ে পদক্ষেপ এবং সেই সূত্রে টাকার লেনদেনের তদন্ত চাওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় বিধাননগর পুরনিগম মানছে, হোর্ডিং সমস্যা বহু গভীরে। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভাকে যুক্ত করে বিধাননগর পুরনিগম তৈরির পর এই সমস্যা আরও বেড়েছে বলে দাবি পুরকর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিদিন বেআইনি হোর্ডিং চিহ্নিত করে ভাঙা হচ্ছে। আবার নতুন করে লাগানো হচ্ছে! লোহার কাঠামো সমেত এক-একটি হোর্ডিং ভাঙতে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
এই প্রসঙ্গে বিধাননগর পুরসভার মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘বেআইনি হোর্ডিং নিয়ে মাথাব্যথা আমাদেরও। সরকারি ভাবে ১৩০টি হোর্ডিং থাকলেও বাস্তবে আমরা মোটে দু’টি হোর্ডিংয়ের টাকা পাই। বাকি কেউ দেয় না।’ তিনি জানান, বেআইনি হোর্ডিং চিহ্নিত করতে নতুন করে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। পাশাপাশি, একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। সেই অ্যাপে চোখ রাখলেই বেআইনি হোর্ডিং চিহ্নিত করা যাবে। এ কাজে দক্ষ ও যোগ্য কর্মীর অভাব মেটাতে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছে পুরনিগম।