তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। রবিবার তাঁকে শিয়ালদহ আদালতের সেকেন্ড জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক পামেলা গুপ্তার এজলাসে পেশ করা হয়। আদালতে সওয়াল জবাবের সময়ে সিবিআই-এর তরফে দাবি করা হয়, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের মধ্যে কথোপকথন হয়। সিবিআই-এর হাতে সেই তথ্য প্রমাণ এসেছে। এই বিষয়টিকেই আদালতে বেশ জোর দিয়ে উত্থাপন করেন সিবিআই-এর আইনজীবী। যদিও সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, জেরায় অভিজিৎ মণ্ডল সেই কথোপকথনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এদিকে পাল্টা সিবিআই-এর আইনজীবী এদিন আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে জানান, ‘কল ডিটেইলস রেকর্ডে সন্দীপের সঙ্গে কথোপকথন আছে। এরমধ্যে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে এর পিছনে। আমরা সত্যি সামনে আনতে চাই। আমরা সন্দীপ ও অভিজিৎকে মুখোমুখি জেরা করতে চাই।’ একইসঙ্গে সিবিআইয়ের তরফ থেকে এও জানানো হয়, ‘আমরা অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছি। তিনি সকাল ১০টায় খবর পান। ১১টার সময় যান। সময়ের ব্যবধান রয়েছে।’
সিবিআই-এর তরফে আইনজীবী বলেন, ‘ওসি একজন সন্দেহভাজন। আমাদের কাঁধে দায়িত্ব আছে সত্যি সামনে আনার। পুলিশ হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালন করেননি। তিনি পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো করে জানেন। তাও সেটা পালন করেননি। ধর্ষণ ও খুনের মামলায় যতটা সতর্ক থাকা উচিত ছিল, ততটা থাকেননি। প্রমাণ লোপাট হয়েছে। অটোপসি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফুটপ্রিন্ট উধাও নষ্ট হয়েছে।’
এদিকে অভিজিৎ মণ্ডলের তরফে আইনজীবী পাল্টা সওয়াল করতে গিয়ে আদালতে জানান, ‘যে যে ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে, সব ধারাই জামিনযোগ্য। যে যে অভিযোগ অভিজিতের বিরুদ্ধে রয়েছে, সেগুলিতে বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে। গ্রেফতার নয়।’ সঙ্গে এও বলা হয়, তাঁর মক্কেলকে ৬টি নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রত্যেকবার গিয়েছেন। ‘মেডিকেল লিভে’ ছিলেন। তাও গিয়েছেন বলে আদালতের জানান অভিজিতের আইনজীবী। এরই রেশ ধরে অভিজিতের আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘শনিবার জিজ্ঞাসাবাদে এমন কী পেলেন, যে গ্রেফতার করতে হবে?’ এর পাশাপাশি অভিজিতের আইনজীবী আদালতে জানান, গ্রেফতারের মেমো পরিবারকে দেওয়া হয়নি। গ্রাউন্ড অ্যারেস্টও জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি পাবলিক সার্ভেন্ট। যে কোনও শর্ত দিন। জামিন চাইছি।’
পাল্টা সিবিআই-এর তরফে আইনজীবী বলেন, ‘আমরা অভিজিৎকে অভিযুক্ত হিসেবে মনে করছি না। তিন দিনের জন্য হেফাজতে চাইছি। মূল অভিযোগে অভিযুক্ত মনে করছি না।’ আর এই প্রসঙ্গেই সিবিআই-এর বক্তব্য,’সিবিআই-পুলিশে টানাটানি আছে বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু এমনটা নয়। আমরা সত্যি জানতে চাইছি। সত্যি সামনে আসুক। এই ঘটনাকে প্রথমে আত্মহত্যা দাবি করা হচ্ছিল। কিন্তু দেখে বোঝা যাচ্ছিল এটা শারীরিক হেনস্থা হয়েছে। অনেক দেরিতে এভিডেন্স বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সন্দীপ ঘোষ হাসপাতালের প্রধান হিসেবে নিয়ম ঠিকমতো ফলো করেননি।’