বৃহস্পতিবার কয়লা পাচারকাণ্ডে ফের তৎপর হল সিবিআই। কলকাতাসহ রাজ্যের মোট ১৩ জায়াগায় তল্লাশি চালাচ্ছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে খবর, প্রাক্তন সিআইএসএফ কর্তা শ্যামল সিং এবং স্নেহাশিস তালুকদার নামে দুজনের বাড়িতে চলে জোর তল্লাশি। বৃহস্পতিবার সকালেই এই সিবিআই অভিযানের কারণেই শ্যামল সিংয়ের ভবানীপুরের দুটি ফ্ল্যাট ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কয়লা মাফিয়া অনুপ মাজি ওরফে লালা ঘনিষ্ঠ এই দু’জন। সূত্রের খবর, স্নেহাশিস তালুকদার কয়লা কারবারে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করতেন। ইসিএল কর্তাদের বা সুরক্ষা বাহিনীকে মধ্যস্থতা করাতেন মোটা টাকার বিনিময়ে। এদিন সিআইএসএফ কর্তার বিশাল অট্টালিকার মত বাড়ি দেখে হতবাক সিবিআই আধিকারিকরাও।
এদিকে দুর্গাপুরের বাসিন্দা সৌরভ কুমার এবং মালদহের রতুয়ার কাহালার বাসিন্দা এক প্রাক্তন সিআইএসএফ কর্তার বাড়িতেও হানা দেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা পাচারকাণ্ডে ইসিএলের ওই প্রাক্তন কর্মীর যোগ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে। সেই সূ্ত্র ধরেই এই অভিযান।
কয়লা পাচারকাণ্ডের মূলমাথা অনুপ মাঝি ওরফে লালা ঘনিষ্ঠরাও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে। ‘হ্যান্ডলার’ মারফত অনেকের কাছে টাকা পৌঁছত বলে জানা গিয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, কয়লা পাচারের টাকা পৌঁছনোর অন্যতম হ্যান্ডলার কালুর বার্নপুরের বাড়িতেও চালানো হয় এই অভিযান।অন্যদিকে দুর্গাপুরের বাসিন্দা সৌরভের বাড়িতেও চলছে সিবিআই অভিযান। একাধিক সংস্থার অফিসে তদন্তকারীরা অভিযান চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে সিবিআই সূত্রে এও খবর মিলছে, সিআইএসএফ কর্তার বাড়ির লোকজনের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়। তিনি বেশ কয়েক বছর আসানসোলে ছিলেন। সেই সময় মাত্র কয়েক বছরে চমকপ্রদ উত্থান হয় তাঁর। মাঝে বেশ কয়েক বছর নিখোঁজ ছিলেন ওই সিআইএসএফ কর্তা। এরপর ফিরেও আসেন। সিবিআই সূত্রে খবর, যাদের বাড়িতে তল্লাশি চলছে তাঁরা সকলেই কয়লা পাচার কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা ‘ঘনিষ্ঠ’। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, লালাকে মদত জোগাতেন ইসিএলের আধিকারিকরা। তাঁরাই বিপুল টাকার বিনিময়ে অবৈধ খনি থেকে কয়লা তুলে বাইরে পাচারের কাজে সাহায্য করতেন। সেই কয়লা ভরতি মালবাহী গাড়ি অতি সহজেই চলে যেত রাজ্যের বাইরে। আর এই গোটা প্রক্রিয়ায় যোগসাজশ ছিল সিআইএসএফ কর্তাদেরও। এদিকে এই কয়লা কাণ্ডে জড়িয়েছে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামও। একাধিকবার জেরার মুখে পড়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একাধিকবার জেরা করা হয়েছে। অন্যদিকে কয়লাকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকেরও। তাঁকে ১২ বারের বেশি তলব করা হলেও তিনি মাত্র একবার ইডির সামনে হাজির হন। সিবিআইয়ের এই তৎপরতা বৃদ্ধির সঙ্গে আগামী দিনে এই মামলায় নতুন কারও নাম সামনে আসে কি না, সেটাই দেখার।