গত ২ জুলাই ২০২১–র ভোট–পরবর্তী হিংসা মামলায় বেলেঘাটার বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের ঘটনায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে ব্যাঙ্কশাল কোর্টের চরম ভর্ৎসনার মুখে পড়তে দেখা গেল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে। শুধু ভর্ৎসনা-ই নয়, তাঁদের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুলে দিল আদালত।
কারণ, খুনের ঘটনার ৪ বছর পর সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। আর এখানেই আদালতের প্রশ্ন, গত এই ৪ বছরে কাউকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা সিবিআই আধিকারিকেরা করেছেন কি না। না প্রয়োজন বোধ করেছিলেন কাউকে গ্রেপ্তার করার। উত্তরে জবাবে সিবিআই–এর তরফে জানানো হয়, আগে যে আধিকারিক এই ঘটনার তদন্ত করছিলেন তিনি মনে করেননি কাউকে গ্রেপ্তার করতে হবে। কারণ তাঁরা সহযোগিতা করছিলেন।
এদিকে শুক্রবার এই মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। এই চার্জশিটে নাম রয়েছে তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালের। এরপর শুক্রবার সেই মামলায় পরেশ পালকে হাজিরা দেওয়ার নোটিস দেওয়াও হয়। সঙ্গে নোটিস পাঠানো হয়েছিল শাসকদলের আরও দুই কাউন্সিলরকেও। কিন্তু, শুক্রবার আদালতে হাজিরা দেননি পরেশ। হাজির হননি কাউন্সিলররাও। এরপরই শুক্রবার আদালতের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, এবার শেষ সুযোগ দেওয়া হল বিধায়ককে।
এর পাশাপাশি বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক এদিন এও জানান, এটা মামলায় একটা বড় মোড়। এখনও পর্যন্ত অভিজিৎ খুনের মামলায় ৩৮ জন অভিযুক্ত বিচারের আওতায় আছেন। অভিযুক্তের আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারক প্রশ্ন করেন, ১৮ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সিবিআই যে পদক্ষেপ করতে চাইছে, সেটা নিয়ে তাঁর কিছু বলার আছে কি না। বা অভিযুক্তদের তরফ থেকেই বা কী চাওয়া হচ্ছে তাও জানতে চান বিচারক। উত্তরে বিশেষ সরকারি আইনজীবী আদলতকে জানান, ‘এই পরিস্থিতিতে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হোক।’
এরপর তদন্তকারী অফিসারের উদ্দেশে বিচারক এ প্রশ্নও করেন, এই ঘটনায় ১৮ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জন্য কোনও চেষ্টা আদৌ করা হয়েছিল কি না। গত কয়েক বছরে তদন্তে সিবিআই আধিকারিকদের মনে হয়েছিল কিনা যে এরা পালাতে পারেন।উত্তরে তদন্তকারী অফিসার জানান, ‘না। আগের তদন্তকারী অফিসার যখন এদের তলব করেছিলেন, তখন তারা হাজিরা দিয়েছিল।’
এই উত্তর শুনে মেজাজ হারান বিচারক। বলেন, ‘আমি চার্জশিট পড়েছি। যে তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন, সেগুলি তো আপনারা ২ বছর আগেই পেয়েছিলেন। আপনাদের জন্য আগে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তরা আটকে আছে। পরবর্তী তদন্তের অধিকার দেওয়া হয়েছে মানেই আপনারা খামখেয়ালিপনা করতে পারেন না।’ সঙ্গে এ প্রশ্নও করেন এই দীর্ঘ সময় ধরে কী করছিলেন তাও। এরপরও এক মাস যে সময় চাওয়া হচ্ছে চার্জশিটের কপি দেওয়ার জন্য তাতেই ক্ষুব্ধ হন বিচারক।
এরপরই বিচারক জানিয়ে দেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার কোনও প্রয়োজন নেই। একইসঙ্গে ১৮ জনকে সমন পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। আর এই সমন পৌঁছে দিতে হবে তদন্তকারী আধিকারিককে। আগামী ১৮ জুলাই আদালতে হাজিরা দিতে হবে। অভিযুক্তরা হাজিরা দিলে, তারপর তারা জামিন পাবেন কি না সেটা দেখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। অর্থাৎ ১৮ তারিখে হাজিরা দিতেই হবে পরেশকে।