১৪ বছর পরে ভারতে ফের হানা দিলো চাঁদিপুরা ভাইরাস। যার সংক্রমণের কবলে এখন গুজরাতের অন্তত ১০টি জেলা। এই দফায় এখনও পর্যন্ত এই সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন মোট ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে গুজরাত, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে। বৃহস্পতিবার এই ভাইরাসের হামলায় প্রথম মৃত্যু ‘কনফার্ম’ করেছিল পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি)। রবিবার পর্যন্ত ‘কনফার্ম্ড’ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯-এ। মৃতদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর-কিশোরী। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। শুধু জুলাইতেই ৭৮ জন চাঁদিপুরা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন। আক্রান্তদের মধ্যে ৭৫ জনই গুজরাতের, ২ জন রাজস্থানের এবং ১ জন মধ্যপ্রদেশের। সব চেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা দিয়েছে সবরকান্তা, আরাবলি, মেহসানা, রাজকোট, মরবি, পঞ্চমহল, এমনকী আহমেদাবাদ শহরেও। আক্রান্তদের নমুনা পাঠানো হয়েছে পুনের এনআইভি-তে। মৃত চার বছরের এক শিশুর নমুনায় চিহ্নিত হয়েছে চাঁদিপুরা ভাইরাস। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, চাঁদিপুরা ভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিল রয়েছে ফ্লুয়ের। জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, বমি, ডায়েরিয়ার পাশাপাশি রোগীর খিঁচুনি, রোগীকে জ্ঞান হারাতেও দেখা যায়। সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়ালে হয় এনসেফালোপ্যাথি, রোগী কোমাতেও চলে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১৪ বছরের কম বয়সিরা আক্রান্ত হয়। চাঁদিপুরা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ২৮ জনের, যার মধ্যে ১৫ জনই শিশু। মৃতদের মধ্যে ২৬ জনই গুজরাতের, বাকি দু’জনের এক জন রাজস্থানের এবং অন্য জন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, বেলে মাছি বা স্যান্ড ফ্লাই, এডিস মশা এবং এঁটুলি (টিক) মাকড় চাঁদিপুরা ভাইরাসের বাহক। এদের কামড়েই ছড়ায় সংক্রমণ। এর মধ্যে বেলে মাছিই সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়ায় এবং তা মূলত গ্রামাঞ্চলে। মাটির বাড়ির ফাটলে কিংবা ইটের বাড়ির খাঁজে বালির মধ্যে জন্মায় বেলে মাছি।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, চাঁদিপুরা সংক্রমণের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, চিকিৎসা হয় লক্ষণ-উপসর্গ ভিত্তিক। এই সংক্রমণের মৃত্যুহার মারাত্মক বেশি (প্রায় ৫৭-৭৫%। চাঁদিপুরা ভাইরাসের বাহক বেলে মাছি, এডিস মশা ও এঁটুলি মাকড় প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। বর্তমানের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভিন রাজ্য থেকে সংক্রমণ আসার সম্ভাবনা প্রচুর।
ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেল্থ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) অতুল গোয়েলের নেতৃত্বে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল, দিল্লি এইম্স, নিমহ্যান্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা চাঁদিপুরা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শুক্রবার একটি বৈঠকও করেন। এ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, বাংলায় আগে কখনও চাঁদিপুরা ভাইরাসের সংক্রমণ না-হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সতর্ক রয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের জনস্বাস্থ্য শাখা।